ভূমিকা,,,,
আজকাল অপপ্রচারের যেন শেষ নেই। অনেক অসনাতনী আমাদের শাস্ত্র গুলো অধ্যায়ণ করে থাকে। তাদের কোনো রকম সংস্কৃত জ্ঞান না থাকার কারণে। শাস্ত্র অধ্যায়ণ করেও শাস্ত্রের অর্থ বুঝে উঠতে পারে না। তারা সংস্কৃত শব্দকে বাংলার মতোই ব্যবহার করে থাকে। কোনো রকমের সংস্কৃত জ্ঞান না থাকার কারণে। তাঁরা আমাদের শাস্ত্র গুলো নিয়ে অপপ্রচার করে আসতেছে। যাদের মধ্যে সাধারণ বাংলা ব্যাকরণের একটি ভাষার রূপতত্ত্বগত শ্রেণীবিভাগ, যা সেই ভাষার বাক্যের নির্মাণ পদ্ধতি ও শব্দের সনাক্তকরণ, করতে গিয়ে খুনসুটি বেঁধে যায়। তাঁহারা কেমন করে সংস্কৃত ভাষার অর্থ বুঝে উঠবে। রামায়ণে বুদ্ধ শব্দটি দেখতে পেয়েই অপসংস্কৃতি ভাইরাসরা বুদ্ধদের বুদ্ধকে খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু সত্যিই কি রামায়ণে বুদ্ধ বলতে বৌদ্ধদের বুদ্ধকে বুঝিয়েছে।
বাল্মীকীয় রামায়ণ ( ২/১০৯/৩৪ ) —
যথা হি চোরঃ স তথা হি বুদ্ধ-স্তথাগতং¹ নাস্তিকমত্র বিদ্ধি। তস্মাদ্ধি যঃ শক্যতমঃ প্রজানাং স নাস্তিকে নাভিমুখো বুধঃ স্যাৎ ৷৷ ৩৪। অনুবাদ:– যেমন চোর, সেইরকম বুদ্ধ (বেদবিরোধী বৌদ্ধ- মতাবলম্বী) তথাগতকে নাস্তিক বলে জানবেন। সেইজন্য প্রজাদের মধ্যে যিনি যোগ্যতম, তিনি কখনও নাস্তিকের অভিমুখী হবেন না।
- এখানে,
বুদ্ধস্তথাগতং = বুদ্ধ: + তথাগতং আছে।
এর পরেই শব্দ এসেছে নাস্তিকমত্র। যার বিশ্লেষণ করলে হয়- নাস্তিকম্+অত্র, এর পরেই এসেছে বিদ্ধি।
সুতরাং, এর অন্বয় হবে, — বিদ্ধি নাস্তিকম্ অত্র তথাগতং অর্থাৎ বুদ্ধবাদী যে নাস্তিক। আর এখানে বুদ্ধবাদীদের কেমন নাস্তিক বলা হচ্ছে? যাদের বেদের প্রতি শ্রদ্ধা নেই।
এখানে বুদ্ধঃ শব্দের দ্বারা বোঝাচ্ছে, যারা বুদ্ধি দিয়ে বেদকে অগ্রাহ্য করে বা খণ্ডন করে। অভিধান থেকে বুদ্ধ শব্দটির কি অর্থ বহণ করে দেখে নেওয়া যাউক।
সূত্র নং ১ :- উইকিপিডিয়া
সূত্র নং ২:- Educalingo
সূত্র নং ৩:- জয় নব অভিধান
সূত্র নং ৪:- আধুনিক বাংলা অভিধান
[আমরা উপরের চয়নকৃত অভিধান সংক্রান্ত থেকে দেখতে পেলাল বিশেষণ পদে বুদ্ধ শব্দটির অর্থ জাগরিত,জ্ঞানী, উদ্বোধিত, প্রাজ্ঞ বুঝিয়েছে। এবং বিশেষ্য পদে বৌদ্ধদের ধর্ম প্রচারক গৌতম বুদ্ধকে বুঝিয়েছে। বিশেষণ ও বিশেষ্য পদ দুইটি আলাদা বিষয়। আর যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে। আর অভিধানে বুদ্ধ শব্দটি বিশেষণ পদে জ্ঞানী উদ্বোধিত জাগরিত অর্থ করেছে। এবং কি উইকিপিডিয়াতেও বুদ্ধ শব্দটির অর্থ করেছে “যিনি পরম শাশ্বত বোধ বা জ্ঞান লাভ করেছেন”]
রামায়ণে যারা বৌদ্ধদের গৌতম বুদ্ধকে খুঁজতে আসেন। তাদের বলে রাখি এখানে বুদ্ধ বলতে বুঝিয়েছে। যারা বুদ্ধি দিয়ে বেদকে অগ্রাহ্য করে। অর্থাৎ এক কথায় বুদ্ধবাদী বা নাস্তিকগোষ্ঠী। যারা নিজের স্ব-বুদ্ধি প্রয়োগ করে বেদের সিদ্ধান্তকে খণ্ডন করে। বেদের প্রতি যাদের আস্থা নেই।
[এখানে বুদ্ধদের গৌতম বুদ্ধকে বলা হচ্ছে না]
আমাদের মন্তব্য:- বাল্মীকীয় রামায়ণের ২/১০৯/৩৪ শ্লোকটিতে বুদ্ধ শব্দটি দেখতে পেয়েই অপসংস্কৃতি ভাইরাসরা বৌদ্ধদের গৌতম বুদ্ধকে খুঁজে পাচ্ছে। অথচ একেবারে জন্যে বৌদ্ধদের কোনো বুদ্ধের নাম সংস্কৃত শ্লোকে অথবা বাংলা অনুবাদেও উল্লেখযোগ্য নেই। তাহলে কেমন করিয়া রায়ায়ণের এই শ্লোকটিতে বৌদ্ধদের বুদ্ধ আসে? যারা এমন শিশু সুলভ দাবী করে। তাদের দাবী কতটা গ্রহণযোগ্য পাঠকের হিতাহিত জ্ঞানের উপর ছেড়ে দিলাম।