সুধী পাঠকবৃন্দ আপনারা অবগত আছেন যে ঈশ্বরের সাকারত্ব বিষয়ে সনাতন ধর্ম জ্যোতির মঞ্চ থেকে কয়েকটা সিরিজ লেখা হয়েছে। সে সিরিজ গুলোর বিরুদ্ধে অপসংস্কৃতির ভাইরসরা নিজেদের কপোলকল্পিত সিদ্ধান্ত দিয়ে বিরুদ্ধাচরণ করেছে। পাঠকবৃন্দ! নিজেদের কপোলকল্পিত সিদ্ধান্ত সনাতন ধর্মে কতটা মান্য পাঠকের হিতাহিত জ্ঞানের উপর ছেড়ে দিলাম। অপসংস্কৃতির ভাইরাসরদের কপোলকল্পিত পাশ কাটিয়ে সানতনীদের মান্য শাস্ত্রসকল থেকে তাদের শিশু সুলভ ও বিকৃতমূলক সিদ্ধান্তের পুঙ্খানুপুঙ্খ সে সব মিথ্যাচারের নিরসন করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও অপপ্রচারকারীদের অপপ্রচার যেন থামছে না। যদিও তাঁদের ক্ষমতা হবে না আমাদের সিরিজ গুলো খণ্ডানোর। তবুও তাঁরা নতুন নতুন অপসিদ্ধান্ত প্রচার করছে। ঠিক তারই ধারাবাহিকতায় তাদের আরোপিত কিছু অপসিদ্ধান্তের আজ বিচার হবে। এবং ঈশ্বরের সাকারত্ব বিষয়ে তাঁরা যে দোষ গুলো চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে আশাকরি সেই সব দোষ তাদের মন কল্পিত ঈশ্বরেই আরোপিত হবে। যদি ক্ষমতা থাকে তবে সনাতন ধর্ম জ্যোতির দাবি গুলো যেন খণ্ডন করে দেখায়।
পাঠকের সুবিধার্থে সনাতন ধর্ম জ্যোতির মন্তব্য!
এখানে অপসিদ্ধান্তীদের পূর্বপক্ষ ও আমদের খণ্ডন গুলো উত্তরপক্ষ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে।
⚫ পূর্বপক্ষের দাবী-
উত্তর পক্ষ — প্রথমত জানার দরকার সাকার কি ও নিরাকার কি? কেননা নিরাকারের অস্তিত্ব নিয়ে জনসমাজে অনেক মতভেদ রয়েছে। যেহেতু সাকার মানে আকার বিশিষ্ট, শরীর ধারী সুতরাং সেখানেই সচ্চিদানন্দ শব্দটি আরোপিত হয় নিরাকারে নয়। সচ্চিদানন্দ বা ব্রহ্মকে সমস্ত বাস্তবতার উৎস, সমস্ত সচেতন চিন্তার উৎস এবং সমস্ত পরিপূর্ণতা-পরমানন্দের উৎস হিসেবে ধরা হয়।পাঠকবৃন্দ আপনারাই বিচার করে বলুন যিনি সমস্ত আনন্দের আকর তিনি কি করে নিরাকার হবেন। আনন্দ শব্দের অর্থ যিনি সুখী। অর্থ্যাৎ আনন্দ শুধু মাত্র ঈশ্বরের সাকারত্বেই প্রকাশ পাবে নিরাকারে নয়? অপপ্রচারকারীরা বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রমাণ করুক নিরাকারে আনন্দ থাকে? অতত্রব নিরাকারে যখন বিন্দু পরিমাণও কোন অস্তিত্ব নাই সেখানে পূর্বপক্ষের ঈশ্বর মন কল্পিত নাকি শাস্ত্র সিদ্ধ তা আগে প্রমাণ করা দরকার নয় কি?
ঈশ্বরের সাকারত্ব নিয়ে পূর্বপক্ষের দেয়া প্রথম দোষ-
উত্তর পক্ষ – অপপ্রচার কারীরা হয়তো ভুলে গেছে শীত, গ্রীষ্ম, ক্ষুধা, তৃষ্ণা রোগ, শোক ও মৃত্যু এসব দোষ জীবে সম্ভব ঈশ্বরে নয়। কেননা ঈশ্বরের অবতরণ পাপের ফলে হয় না। যাঁরা পাপ গ্রস্থ তাঁরাই শীত, গ্রীষ্ম, ক্ষুধা আদির দ্বারা প্রভাবিত হয় ঈশ্বর এসব দ্বারা প্রভাবিত হন না। কেননা ঈশ্বরের অবতরণ জীবের মুক্তির কারণ প্রমাণ দেখুন ভগবদগীতা ৪/৯
পূর্বপক্ষের দেয়া দ্বিতীয় দোষ
উত্তর পক্ষ – ঈশ্বরকে সাকার স্বীকার করলেই কেবল মাত্র তিনি সর্বব্যাপী হতে পারেন। ঈশ্বরকে নিরাকার মনে করলেই তিনি সর্বব্যাপী হতে পারেন না। কেননা যেখানে আপনাদের কপোলকল্পিত ঈশ্বরের অস্তিত্বই সঙ্কটে সেখানে সেই ঈশ্বরের সর্বব্যাপিত্ব অন্ধের হস্তি দর্শন মাত্র। উদাহরণ সহকারে বুঝিয়ে দেওয়া হলো যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয় বাতাস সাকার নাকি নিরাকার? উত্তরে আসবে নিরাকার। কিন্তু ভালো করে বিবেক বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে চিন্তা করুন যেখানে বাতাস অনূভূত হয়, বাতাসের ভর নির্ণয় করা যায়, বাতাস বেলুনে বন্ধি করে রাখা যায় সেই বাতাস কিভাবে নিরাকার হয়?? নিরাকার বস্তু কি অনুভূত, ভর ও বন্ধ করে রাখা সম্ভব!? অর্থ্যাৎ বাতাস যেমন অনুভূতি দিতে পারে, ভর আছে ও নিদিষ্ট জায়গায় বন্ধ করে রাখা যায় তারপরও বাতাস যেমন সর্বব্যাপী তেমনিভাবে ঈশ্বর সাকার হয়েও তাঁর অচিন্ত্য শক্তিমত্ত্বাই তিনি সর্বব্যাপী৷ এক্ষেত্রে অবশ্য কেউ কেউ যুক্তির অবতরণা করে যে আপনাদের সাকার ঈশ্বর যদি সাকার অবস্থাতেই সর্বব্যাপী হবেন তাহলে তাঁকে দেখা যায় না কেন? এর উত্তর হলো হে পূর্বপক্ষী ঈশ্বর দর্শন কি ছেলের হাতের মুয়া! চাইলেই পাওয়া যাবে! আগে ঈশ্বরের দর্শন পাবার মতো যোগ্যতা অর্জন করুন তাহলে ঈশ্বর কৃপা করেই দর্শন দিবেন। একথা মুণ্ডক শ্রুতিতেই প্রতিপন্ন হয়েছে। প্রমাণ দেখুন – মুণ্ডকোপনিষদ ৩/২/৩, কঠোপনিষদ ১/২/২৪
ঈশ্বর কে বহু শাস্ত্রের ব্যাখ্যানের মাধ্যমে, বুদ্ধির দ্বারা,বহুবার জেনেও ঈশ্বরের উপলব্ধি হয় না কিন্তু ঈশ্বর যাকে কৃপা করেন সেই ভক্তকেই তিনি কেবল দর্শন দেন। এজন্যই শ্রুতি স্পষ্ট করে বলেছে “এষ আত্মা তস্য স্বাম তনূম বিবৃণুতে” এই পরমাত্মা যাকে কৃপা করেন তাঁর কাছেই মেলে ধরেণ আপন তনু(দেহ)। শ্রুতিতে উল্লেখিত তনু শব্দের অর্থ নিচে দেওয়া হলো
পূর্বপক্ষের দেয়া তৃতীয় দোষ
উত্তর পক্ষ –হে পূর্বপক্ষ অনাদি ও অনন্ত কি তা আগে জানুন। তারপর ঈশ্বর সাকার হলে অনাদি অনন্ত হতে পারবেন না এরকম মন্তব্য করুন। কেননা পাঠকবৃন্দ যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে। নিচে প্রমাণ সহ যুক্ত করলাম।
পূর্বপক্ষের দেয়া চতুর্থ দোষ
উত্তর পক্ষ – তৃতীয় উত্তরেই দেখানো হয়েছে যে নিরাকার পদার্থের কখনো গুণ থাকে না। সুতরাং আপনাদের ঈশ্বরের সর্বজ্ঞতার জ্ঞান কিভাবে থাকে? তাছাড়া জ্ঞান থাকতে হলে তাকে অবশ্যই সাকার হতে হবে। কেননা নিরাকারে জ্ঞান থাকা তো দূরের কথা নিরাকারে জ্ঞান থাকা স্বপ্নেও চিন্তা করা যায় না। পূর্বেই আপনাদের আপত্তির খণ্ডন করা হয়েছে যে সাকার ছাড়া নিরাকার সর্বব্যাপক হতে পারে না। কারণ নিরাকারের অস্তিত্বই নাই সেখানে সর্বব্যাপকতা বাল্যখিল্য যুক্তি ছাড়া কিছু না। তারপর আপত্তি তুলেছেন সাকার ঈশ্বর অন্তর্যামী হয় না! বলি ভীতরে কালির অক্ষর অবশিষ্ট আছে নাকি গেছে?
পূর্বপক্ষের দেয়া পঞ্চম ও ষষ্ঠ দোষ –
উত্তর পক্ষ -ঈশ্বর নিত্য শুদ্ধ জন্যই তিনি সাকার। আপনার নিরাকার ঈশ্বরের নিত্যতা গুণ থাকে কিভাবে! কারণ আপনারাই বলে থাকেন ঈশ্বর গুণরহিত! তাহলে সেখানে আপনাদের ঈশ্বরের নিত্যতা গুণ প্রহসন নয় কি! তারপর ষষ্ঠ দোষে বলেছেন ঈশ্বর সাকার হলে তিনি আশ্রয় হতে পারে না! অথচ যুক্তি বিচারে দেখা যায় আশ্রয় কেবল মাত্র তিনি দিতে পারেন যিনি সাকার!নিরাকার পদার্থের অস্তিত্ব সংকটে থাকার কারণে তিনি আশ্রয় দিতে ব্যার্থ। সুতরাং জগৎ ঈশ্বরের আশ্রয়ে থাকার কারণে ঈশ্বর সাকারত্বই প্রমাণ হলো। অতত্রব আপনি মনে করুন একটি ঘর নির্মাণ করেছেন তো ঐ ঘরে কি আপনি থাকবেন না!? তেমনি জগদীশ্বর যেমন বৈকুন্ঠ আদি ভুবন নির্মাণ করেছেন তখন বৈকুন্ঠআদি ভুবনও তারই আশ্রয়ে থাকবেন এবং তিনি সেই ভুবন গুলোতে সর্বদা বিচরণ করবেন এতে দোষ হয় না।
[এভাবে আপনার প্রতিটা অপদাবীর খণ্ডন করা হলো এবং আশা রাখি এই মঞ্চ থেকে যেসব প্রশ্ন করা হয়েছে সেসব প্রশ্নের উত্তর আসবে। নয়তো ঈশ্বরের সাকারত্ব নিয়ে শাস্ত্রর্থ করতে চাইলে সনাতন ধর্ম জ্যোতির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবেন। তবে অবশ্যই আপনি যে সংগঠনের পক্ষ থেকে শাস্ত্রর্থ অংশগ্রহণ করবেন সেই সংগঠনের আপনি যে নিবন্ধিত সদস্য তাঁর নথিপত্রের প্রমাণ দিয়ে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবেন।]
⚫ আরো দেখুন
আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা দয়ানন্দ কর্তৃক মূর্তিপূজা