শব দাহের সময় কি হিন্দুরা আল্লা এবং মুহম্মদের নাম নেয় ?

শেয়ার করুন

 

বাংলাদেশের কিছু অসনাতনী কতিপয় ধর্ম প্রচারকরা দাবী করেন। হিন্দুরা শবদাহের সময় তাদের আল্লাহ এবং নবীর নাম নেয়। এই কথাটি বাস্তবায়ন করতে যে মন্ত্র বলে সেটি হলো-

অহিংস পদম বৈষ্ণং লাইলং ব্রমত্তম ব্রম্ম লাইলাং বৈষ্ণ সদাসত্য বিষ্ণং বিষ্ণং ব্রম্ম বিষ্ণং মুহম্মদং লাইলাং লাইলাং আল্লা ব্রম্মানং বৈষ্ণং তাপসং বিনাবতি সতং তাপস্য বৈশ্য আল্লাহা ব্রম্ম তাপস্য বিষ্ণু এই সব বলে হিন্দুরা নাকি শবদেহকে মুহম্মদের নামে আল্লার কাছে ন্যস্ত করে!

 

 

প্রথমত:- যেটাকে মন্ত্র বলে চালিয়ে যাচ্ছে। এই মন্ত্রের শাস্ত্রীয় কোন রেফারেন্স নেই। থাকবে কি ভাবে! এই সব উদ্ভট মন্ত্র সনাতন ধর্মের অষ্টাদশ বিদ্যার কোথাও উল্লেখযোগ্যে নেই।

 

দ্বিতীয়ত:- এটা মন্ত্র বলে কোন মহারাজ, কোনো আচার্য,কোনো মহাপুরুষ স্বীকৃতি দেয় নি। তাই এই সব অকথ্য কুকথ্য শব্দ কখনোই সনাতন ধর্মে মান্য নয়।

তৃতীয়ত:- এই মিথ্যাচারের জবাব একটা তথ্যেই দেওয়া যায়, সেটা হলো- পৃথিবীতে মুহম্মদ এবং আল্লার জন্মের  আগে থেকে সনাতনী হিন্দুরা শবকে দাহ করে আসছে, তাহলে সেই সময় তারা কোন মন্ত্র বলে মৃতদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করতো ?

 

 

যা হোক, নিচে দেখে নিন- পুরোহিত দর্পণের ভিত্তিতে, শবদাহের সময় আসলেই কোন কোন মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয় এবং সেগুলোর মধ্যে আল্লাহ মহাম্মদ জাতীয় কোনো  নাম আছে কি না ?

শবদেহকে স্নান করানোর সময় যে মন্ত্র বলতে হয়, সেটা হলো-

“ওঁ গয়দীনি চ তীর্থানি যে চ পুন্যাঃ শিলোচ্চয়াঃ।   কুরুক্ষেত্রঞ্চ গঙ্গাঞ্চ যমুনাঞ্চ সরিদ্বরাম।               কৌশিকীং চন্দ্রভাগাঞ্চ সর্ব্বপাপপ্রণাশিনীম্।।       ভদ্রাবকাশাং সরযুং পনসং গণ্ডকীং তথা।                   বৈনবঞ্চ বরাহঞ্চ তীর্থং পিণ্ডারকং তথা।।               পৃথিব্যাং যানি তীর্থানি সরিতঃ সাগরস্তথা।                       ধাত্বা তু মনসা সর্ব্বে কৃতস্নানং গতায়ুষং।।”

 

এরপর পিণ্ডদানের সময় উচ্চারিত মন্ত্র হলো-

“ওঁ অপহতাসুরা রক্ষাংসি বেদিষদঃ।”

 

তারপর প্রেতকে আহ্বানের মন্ত্র হলো-“

ওঁ এহি প্রেত সোম্য গম্ভীরেভিঃ পথিভিঃ পূর্ব্বিণেভিঃ।দেহ্যস্মভং দ্রবিণেহ ভদ্রং রয়িঞ্চ নঃ সর্ব্ববীরং নিযচ্ছ।।”

এবং

“অমুকগোত্র প্রেত অমুকদেবশর্ম্মন্নবর্নেনিক্ষ্ব।”

এবং

অমুকগোত্র প্রেত অমুকদেবশর্ম্মন্নেতত্তেহমুপতিষ্ঠতাম্ ।।

 

এরপর চিতার উপর শবদেহ স্থাপন করার সময়ের মন্ত্র হলো- 

“ওঁ দেবাশ্চাগ্নিমুখা এনং দহন্তু।”

 

 

এবং শেষে দাহধিকারী, অগ্নি হাতে নিয়ে চিতা প্রদক্ষিণ করতে করতে যে মন্ত্রটি পাঠ করে, সেটি হলো-

“ওঁ কৃত্বা তু দুষ্কৃতং কর্মং জানতা বাপ্যজানতা ।

মৃত্যুকালবশং প্রাপ্য নরং পঞ্চত্বমাগমত্।।

ধর্ম্মাধর্ম্মসমাযুক্তং লোভমোহসমাবৃতম্

দহেয়ং সর্বগাত্রানি দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু।।”

অনুবাদঃ তিনি জেনে বা না জেনে অনেক দুষ্কর্ম করে থাকতে পারেন। কালবশে মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে। এ দেহ- ধর্ম, অধর্ম, লোভ, মোহ প্রভৃতি দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। হে অগ্নিদেব, আপনি তার দেহের সকল অংশ দগ্ধ করে দিব্যলোকে নিয়ে যান।

 

সিদ্ধান্ত:- যারা ইসলাম নামক মহামিথ্যার ধারক বাহক এবং প্রচারক, তাদের মিথ্যাচারের কোনো সীমা থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক, এটা নিয়ে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আমাদেরকে শুধু প্রকৃত সত্যটা জানতে হবে এবং সবাইকে তা জানাতে হবে, তাহলেই কোনো হিন্দু, মুসলমানদের মিথ্যা প্রচারে বিভ্রান্ত হবে না এবং মুসলমানদের কথায় বিশ্বাস করে নিজের সর্বনাশ করবে না।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করা দন্ডনীয় অপরাধ