শ্রীমদ্ভগবদগীতা অনুযায়ী মূর্তিপূজার প্রমাণ ও অপপ্রচারকারীদের আক্ষেপ খণ্ডণ

শেয়ার করুন

 

সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ..!

সনাতন ধর্মে শ্রীমূর্তির পূজা বিষয়ক শ্রুতি প্রমাণ বিগত দুইটি আর্টিকেল দেখানো হয়েছে। অপপ্রচারকারীরা সেদুটি আর্টিকেলের জবাব দিতে না পেরে আজকাল অনার্য ও অহিন্দুরা বলে বেরাচ্ছে ভগবদগীতাতে শ্রীবিগ্রহ/ শ্রীমূর্তির পূজা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আজ এই আর্টিকেলে দেখানো হবে ভগবদগীতাতে সত্যিই কি শ্রীবিগ্রহের পূজা নিষিদ্ধ হয়েছে নাকি সিদ্ধ। পাঠকবৃন্দ জেনে রাখা ভালো আমাদের সনাতন ধর্মে উপাসক গণের স্বাধীনতা মোতাবেক ঈশ্বরের আরাধানার কথা বর্ণিত হয়েছে। আমাদের ধর্ম প্রসিদ্ধ ধর্ম যেখানে জোর পূর্বক কিছু চাপিয়ে দেয়া হয় না বরং শাস্ত্র সিদ্ধান্তে সাকার ও নিরাকার দুই ভাবেই ঈশ্বরের উপাসনা করা যায়। কারণ কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই একমাত্র প্রমাণ। দেখুন শ্রীমদ্ভগবদগীতা [১৬/২৪]

অতত্রব শাস্ত্র যেখানে সাকার ও নিরাকার দুই রূপের উপাসনার কথা বলেছে। সেখানে অনার্য ও অহিন্দুরা অযথাই আস্ফালন করে বেরাচ্ছে। শাস্ত্র বিধি পরিত্যাগ করে যাঁরা নিজের কপোলকল্পিত মতবাদ সমাজে প্রচার করে তাঁরা উৎপাতেরই সৃষ্টি করে এবং তাঁরা কখনোই পরাগতি লাভ করতে পারে না। দেখুন ভগবদগীতা -[১৬/২৩]

অতত্রব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভাষায় বলা যায় অনার্যগণ সমাজের আর্বজনা স্বরূপ তাঁরা যেভাবে শাস্ত্রের বিকৃতি করা শুরু করেছে তাতে তাঁদের সিদ্ধিতা বক ধার্মিকের সামিল৷ আর এই সব অনার্যদের কারণে অহিন্দুরা সনাতনধর্ম নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচারে ব্যাস্ত থাকে।

 

 

পাঠকবৃন্দ চলুন আর কথা না বাড়িয়ে ভগবদগীতাতে মূর্তি পূজা নিষিদ্ধ এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত করি। পাঠকবৃন্দ শ্রীমদ্ভগবদগীতার বিভিন্ন অধ্যায়েই ঈশ্বরের  সাকার রূপের আরাধনার কথা বর্ণিত হয়েছে। তৎ ব্যথিতও ভগবদ গীতার দ্বাদশ অধ্যায়ের সাকার উপাসনা শ্রেষ্ঠ নাকি নিরাকার উপাসনা শ্রেষ্ট সেকথা স্বয়ং ভগবদগীতার বক্তা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলেছেন। পাঠকবৃন্দ আপনাদের উদ্দেশ্যে প্রমাণ এখানে যুক্ত করছি যা পাঠ করলে আপনাদের সংশয় অনেকটাই কেটে যাবে।এই প্রমাণটি সবার মান্য সাধক সঞ্জীবনিকৃত গীতা প্রেস থেকে প্রকাশিত ভগবদগীতার দ্বাদশ অধ্যায়ের অবতরণিকা। অর্জুন যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে সাকার নিরাকার উভয়ের মধ্যে কোন উপোসনা শ্রেষ্ঠ? তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উওর থেকে প্রমাণ হয়েছে ঈশ্বরের সাকার উপাসনাই সর্বশ্রেষ্ঠ যোগ। যা ভগবদগীতাতে শ্রীকৃষ্ণ ভক্তিযোগ বলে ঘোষণা করেছেন। এবারে আসি মূল প্রমাণে।  আবারো বলছি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে অর্জুন যখন সাকার ও নিরাকার উপাসনার কথা শুনেছেন তখন অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্নে করেছেন কোন উপাসনা শ্রেষ্ট। দেখুন নিচে গীতা শাস্ত্র প্রদর্শন সহ শ্রীমদভগবদ গীতা-[১২/১]

অর্জুনকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বলেছেন যে অনন্যপ্রেমী ভক্ত পূর্বোক্ত প্রকারে নিরন্তর আপনার ভজন ধ্যানে ব্যাপৃত থেকে সাকাররূপ পরমেশ্বর আপনাকে ভজনা করেন এবং যাঁরা কেবল অবিনাশী নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করেন এই উভয় প্রকার উপাসকের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যোগবেত্তা কে? এর উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ কি বলেছেন গীতাতে -[১২/২]

পাঠকবৃন্দ দেখুন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন- যে ভক্তগণ অতিশয় শ্রদ্ধাসহকারে সাকার পরমেশ্বরের সাকার রূপী শ্রীকৃষ্ণের উপাসনা করেন তাঁরাই অতিশয় শ্রেষ্ঠ যোগী। কিন্তু এজন্য যে নিরাকার উপাসনাকারীগণ অশ্রেষ্ঠ তা নয় কেননা যাঁরা  নিরাকার উপাসনা তাঁরাও কৃষ্ণকে লাভ করেন। দেখুন ভগবদগীতা -[১২/৩-৪]

যাঁরা ভগবানের নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করেন তারাও কৃষ্ণকে লাভ করবে। তবে নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করা অনেক ক্লেশকর ও কষ্টসাধ্য। একথা আমার নয় একথা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলেছেন দেখুন ভগবদগীতা -[১২/৫]

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন নিরাকার ব্রহ্মের সাধনায় ক্লেশ হয় কারণ অব্যক্ত বিষয়ক গতি লাভ করা কষ্টকর। পাঠকবৃন্দ নিরাকার উপাসনা ক্লেশকর ও কষ্টসাধ্য হলেও ভগবানের শ্রীবিগ্রহের উপাসনা সহজ সাধ্য। দেখুন ভগবদগীতা -[১২/৬-৭]

সাকার তথা বিগ্রহ পূজার সমর্থনে ভগবান তাঁর চিন্তা ও ভজনার কথা বললেন। এবারে দেখুন ভগবদগীতা -[১২/৭]

শ্রীকৃষ্ণ বললেন যারা ভগবানের সাকার রূপের তথা মদগদচিত্ত অর্থ্যাৎ যারা শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত সেইসব প্রেমিক ভক্তই শ্রীঘ্রই মৃত্যুরূপ সংসার সমুদ্র থেকে উদ্ধার হবে। এখানে শ্রীঘ্রই কথা দ্বারা ভগবানের বিগ্রহ পূজা সহজ সাধ্য তাঁর প্রমাণ নিরূপণ করা হলো। অতত্রব অনার্য্য ও অহিন্দুগণ শাস্ত্র বিকৃতি থেকে সাবধান হউন। আবার দেখুন গীতা -[১২/৮]

পাঠকবৃন্দ এই শ্লোকেও বিগ্রহ পূজার শ্রেষ্ঠতা নিরূপণ করা হয়েছে। অতত্রব ঈশ্বরের সাকার উপাসনা তথা শ্রীমূর্তির পূজাই সর্বশ্রেষ্ঠ।

 

 

এছাড়াও ভগবত গীতা থেকে সাকার উপোসনার আরো কিছু প্রমাণ দেওয়া হচ্ছে। যে প্রমাণ গুলো শ্রীবিগ্রহ পূজার পূর্ণ সমর্থণ করে। দেখুন ভগবদগীতা -[৯/২৬]

পরমেশ্বর ভগবানের উদ্দেশ্যে নিবেদিত বস্তু ভগবান সাকাররূপে প্রকট হয়ে প্রীতিসহকারে ভক্ষণ করেন।তাহলে পাঠকবৃন্দ ভেবে দেখুন অপপ্রচারকারীরা কতটা মূর্খ তাঁরা ভগবদ গীতা না পড়েই দাবি করেছে ভগবদ গীতাতে নাকি  বিগ্রহ পূজার নিষেধ আছে।

 

 

আবারো একটি প্রমাণ দেখুন –ভগবদগীতা [৯/২৭

পরমেশ্বর ভগবান বলেছেন হে অর্জুন “যা আহার করো” তা সবই আমাকে(কৃষ্ণ) অর্পণ করোপাঠকবৃন্দ এজন্যই মূলতো ভগবানের শ্রীবিগ্রহের উপাসনা সর্বশ্রেষ্ঠ উপাসনা। কারণ এই উপাসনাতে ভগবানের সেবা করার মূখ্য ভূমিকা থাকে। যেমন ভগবানকে নৈবেদ্যাদি অর্পণ, ভগবানের শ্রীচরণে ফুল, জল, তুলশী, বেল্য পত্রাদি ও ফল অর্পণ করা যায়। সুতরাং ভগবদগীতাতে শ্রীমূর্তির পূজা নিষিদ্ধতো নয়ই বরং শ্রীমূর্তির(বিগ্রহ) পূজা সর্বশ্রেষ্ঠ উপাসনা পদ্ধতি।  

 

 

আরো দেখুন 

🔸আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা দয়ানন্দ কর্তৃক মূর্তিপূজা

🔸দয়ানন্দস্বামীর মূর্তিপূজার প্রমাণ ও আর্যসমাজী আক্ষেপ খণ্ডন

🔸অনার্য কর্তৃক মূর্তি পূজা খণ্ডন নামক সিরিজের অপদাবীর নিরসন

🔸শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে প্রতিমা পূজার নিষেধ করেছে কি?

 

 


শেয়ার করুন

One thought on “শ্রীমদ্ভগবদগীতা অনুযায়ী মূর্তিপূজার প্রমাণ ও অপপ্রচারকারীদের আক্ষেপ খণ্ডণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করা দন্ডনীয় অপরাধ