সমাজে শূদ্র নিয়ে আমরা নানান মতভেদ দেখতে পাই।বিশেষ করে শূদ্রদের দলিত বলে আমরা প্রায় সকলের হতে শুনতে পাই।আসলেই কি শূদ্র দলিত।শাস্ত্র শূদ্রদের কি অসম্ভব ভাবে নিপীরিত করেছে।তাই জানবো,শূদ্রের বিষয়ে।শূদ্র কি কেন তা জানবো।আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় জানবো।যাতে আমাদাের সব জানতে হবো না,আজকে এখানে যে বুষয়ে আমরা কথা বলবো,সমাজে শূদ্র নিয়ে যে অপপ্রচার করা হয় তা নিয়ে বেশ ভ্রান্তি নিরসন হবে।তো শূদ্রদের প্রসঙ্গে শুরু করা যাক।
শূদ্র কি
শূদ্র এক জাতিবিশেষ।তো শূদ্র জাতির উৎপত্তি নিয়ে ঐতিহাসিক ভাবে বেশ মত আছে।অনেকে মনে করে থাকেন শূদ্র আগে আলাদা ছিলো পরে যুক্ত হয়েছে।এই নিয়ে বেশ মতভেদ দেখা যায়।তা শূদ্র বিষয়টা শাস্ত্রের আলোকেই আমরা দেখবো।যেহেতু বৈদিক যুগ এ চার বর্নের একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয় প্রদর্শন করা হয়। শূদ্র এসেছে মূলত ব্রহ্মা এর পাদপদ্ম হতেই।শাস্ত্রে শূদ্রের আর্ভিবাব এভাবেই বর্নিত হয়েছে।
ঋগ্বেদের পুরুষ সুক্ত (১০/৯০) এর ১২নং মন্ত্রে বলা হয়েছে, “পদ্ভ্যাং শূদ্রো অজায়ত…..” অর্থাৎ পরমাত্মার চরণ যুগল হতে জন্ম নিয়েছে শূদ্র।
স নৈব ব্যভবৎ স শৌদ্রং বর্ণমসৃজত পূষণমিং বৈ পূষেয়ং হীদং সর্বং পুষ্যতি যদিদং কিংচ।। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ –১/৪/১৩)
অর্থাৎ,(সকল সৃষ্টির পরে) তিনি(পরমাত্মা) তখনও সমর্থ(তৃপ্ত) হলেন না। সেই জন্য শূদ্রজাতি পুষা(লালনপালনকারী) এর সৃষ্টি করলেন। শূদ্রই সমস্ত মানব জাতিকে পোষণ (পালন) করেন। এই পৃথিবীই পূষা নামে প্রসিদ্ধ কারণ যা কিছু দৃশ্যমান,তার সবকিছুই পৃথিবী পোষণ করেন। ”
এভাবে আমাদের স্বাভাবিক তর্কটা শাস্ত্র ও justify করেছে।শাস্ত্রও আমাদের মতোই বলছেন।তাই শ্রুতিতে এই বচন এসেছে।এখন শূদ্রের ইতিবৃত্ত আপনাদের স্পষ্ট হচ্ছে।শূদ্র বর্নাবিভাগের সবথেকে নিম্নস্তরের একটি জাতি।আর এটিই হলো শূদ্রে প্রাথমিক বা Basic পরিচয়।
শূদ্রের কাজ কি নিকৃষ্টতম
বির্ধমী, বামপন্থীদের একটা কথা বলতে শোনা যায়,তা হলো শূদ্র জাতির সাথে অন্যায় হয়েছে।অত্যাচার হয়েছে।হয়েছে নিপিড়ীন,সাথে কাজের দিকেও। মোটেও তাই একদম নই।পরির্চাযক কাজ কখন হতে নিকৃষ্টতম হলো তাই বাম এবং বির্ধমীরা ভালো করে ব্যাখ্যা করতে পারে না।তা হলে বলি-শূদ্র পরির্চাযক কাজ +শিল্পের কাজ,দুটিতেই পারর্দশীতা রাখে। তা আমরা শূদ্রের কাজের বিষয় মনুস্মৃতি তে দেখবো-
মনুস্মৃতি-১-৯১(শূদ্রের কাজ তিন বর্নের সেবা।)
গীতা-১৮-৪৪(পরির্চাযক ব্রত শূদ্রের স্বভাব)
এছাড়া বিভিন্ন শাস্ত্রে শূদ্রের কাজ আছে,তবে আরেকটা বিষয় ও আমরা লক্ষ্য করি,সেটা হলো-বিষ্ণু সংহিতার একটি শ্লোকে (২/৫) বলা হয়েছে, “শূদ্রস্য সর্ব্বশিল্পানি…” অর্থাৎ শূদ্রদের কার্য সবধরনের শিল্পকর্ম তথা সৃজনশীলতা।
তা আমো প্রধান দুটি শাস্ত্র,গীতা ও মনুস্মৃতিতে পরির্চাযক ব্রত পেয়েছি,আর স্মৃতিশাস্ত্র বিষ্ণু সংহিতায় সবধরনের শিল্পকার্য কাজ।
তো এখন যাস্টিফাই করা যাক,পরির্চাযক কাজ কি নিকৃষ্টতম❓আসলে বামপন্থী ও বির্ধমীরাই একে নিকৃষ্ট করেছে,কারন মধ্যযুগের ব্রাহ্মন্যবাদ কুসংস্কার কোট করে তারা সমগ্র শাস্ত্রের যুগকে এক করে দেই।তা একদমই বিকৃত কথা।সেবা অর্থ কাউকে পরির্চযা এমনই।তা তিনবর্নের সেবাই শূদ্রের সাথে তেমন অন্যায় করা হতো তা কেউ শাস্ত্রে দেখাতে পারবে না।এখানে বলা হচ্ছে যে,উদাহারন দিয়ে বললে আরো সহজ হবে-তা হলো কোনো প্রতীষ্ঠানের পিয়ন,ঝাড়ুদার,দারোয়ান ইত্যাদী ছোট পোস্টে চাতরীরতরা যেভাবে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাকে সাহায্য করেন ছোট খাটো বিষয়ে তেমনই।তাতে এই বিষয় স্পষ্ট,শূদ্র কর্মক্ষেত্রে তিন বর্নকে এরূপই সাহায্য করেন।অনেকের মতে ব্রাহ্মনদের সাহায্যর জন্য তাদের সৃষ্টি,কিন্তু তা ভুল,ব্রাহ্মনদের প্রভু বা এরূপ স্মৃতিতে কিছুই নেই।তাই এটা ভুল স্পষ্টই বোঝা যায়।
আবার এখানে এটাও আসতে পারে যে,তিন বর্নের কিভাবে সাহায্য শূদ্র আসতে পারেন❓তা কিরকম।হ্যাঁ
তিন বর্নের সাহায্য শূদ্র পরির্চাযক ব্রতে আসেন।কারন অধ্যাপনা,যোজন,যুদ্ধে বা ব্যবসায় এরা অঙ্গ-পরিচালক,সহযোগিতায় আসেন।এভাবেই এরা তিন বর্নের সেবা করেন।তা এটা এমন না যে,তাদরর দাসত্ব করা বা খাঁটা।(মনুস্মৃতিতে দাসত্ব নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারনা আছে,অনেক প্রকারের দাসত্বে এর কথা বর্ননা আছে।তবে দাসত্ব গ্রহন করলে পরির্চাযক হবে না।অব্যশই শূদ্র দাস হতে পারে,স্মৃতি বচন কিন্তু দাসত্ব গ্রহনে একের অধিনস্ত হবে,তখন সে গোলামি বা তার আদেশ খাটবে,সেটা তখন পরির্চাযক ব্রত হবে না।)তাই শূদ্র যে যাস্ট দাসত্বের জন্য এটা ভ্রান্ত আর পরির্চাযক বা সেবা যে দাসত্ব বরন তাও ভ্রান্ত।সুতরাং এই ভ্রান্ত ধারনা এখানে খন্ডানো গেলো
এবার আসবো স্মৃতির আরেক বচন নিয়ে,তা হলো শিল্প।শূদ্র কি পরির্চাযক ব্রতই করবে শুধু।তা অব্যশই না কারন স্মৃতি আবারো আরেকটা কর্ম দেখিয়েছে তা হলো শিল্প।প্রাচীন ভারতে শূদ্রদের ৬৪ কলার শিক্ষা দেওয়া হতো। ‘কলা’ অর্থ কোনো কাজকে নিখুঁতভাবে করার কৌশল। ৬৪ কলার মধ্যে অন্যতম গীত (গান), নাট্য, চিত্রাঙ্কন, ভাস্কর্য, স্থাপত্যবিদ্যা, ধাতুবিদ্যা, ভেষজ চিকিৎসা (বৈদ্য) প্রভৃতি। কোন মূ-র্খ বা নির্বোধের পক্ষে এসব শিল্পকলা আয়ত্ত করা সম্ভব নয়।এখন এই ৬৪ কলা কোনো মূর্খের আয়ত্ত এর কাজ না।কলা এর মানেই নিপূর্ন বা গুন।গীত,নাট্য,ভাস্কর্য ইত্যাদি মানুষের পরিচয় বহন করে।এসব শিল্প মানুষকে অন্যতম করে।অব্যশই প্রাচীন ভারতের অনেক নাট মন্দির,মন্দির,স্থাপত্যকলায় শূদ্রের ভূমিকা অপরিমেয়।
তাহলে কর্ম নিয়ে যে ভ্রান্ত ধারনা বাম বা বির্ধমীরা দিয়ে থাকেন তা এখানে স্পষ্টই যে এসব প্ররোচনা মাত্র।এসবে তারা মধ্যযুগের কুসংস্কার যুক্ত করে আগের দিনকে ভালো মতো যাস্টিফাই করার চেষ্ঠা করে।সেবা সহযোগিতার ও শিল্পতে শূদ্রকে যথেষ্ট মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।তা শূদ্রের কাজ যে নিকৃষ্টতম না আর শাস্ত্র যে শূদ্রের সাথে অন্যায় করেনি তা এখানে আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরা হলো।
শূদ্র এর আরো কিছু বিষয়ক
বিশেষত আমরা শূদ্রের নিয়ে আরো বেশ অপপ্রচার লক্ষ্য করিত আমরা শূদ্রের নিয়ে আরো বেশ অপপ্রচার লক্ষ্য করি।তা আমরা হরহামেশাই লক্ষ্য করে থাকি।শূদ্রকে অবহেলিত হিসেবে দেখাতে মনুস্মৃতি সবথেকে বেশি ব্যবহৃত হয় আর সবথেকে বেশি হলো ৮ম অধ্যায়।রাজার ধর্ম বিবরন করা এই অধ্যায়ের সম্পর্কে আগে কিছু Fact check করবো।
💥মনুস্মৃতির অষ্টম অধ্যায়ের রাজধর্ম বিহিত কার্যের অধ্যায় অপপ্রচার মহলে বেশ চর্চিত।হ্যাঁ,সেখানে এইরূপ আইন আছে।আইন থাকা কোনো বিষয় না,কিন্তু তারা শূদ্রের আইন সবথেকে অমানবিক আর কুৎসিত বলে বেঁড়ান।এটা অব্যশই লক্ষ্যনীয় যে মনু শূদ্রের আইন কঠোর করেছেন।কেন❗তার পিছনে কারন কি।শূদ্র নিচু বলে,শূদ্র অবহেলিত বলে❓নাকি ব্রাহ্মন্যবাদ।যাস্টিফাই করা যাক,মনুস্মৃতির মধ্য ব্রাহ্মনকে আইন প্রনেতাই বেশ লক্ষনীয় করা যায় না।হ্যাঁ, এটা অসত্য না যে,শাস্ত্র ব্রাহ্মনকেও কঠোর শাস্তি প্রদান করেছেন।তা পরে দেখানো হবে।তো সমগ্র বিষয় বিবেচনায় মনুর এখানে বিধান শূদ্রের প্রতি কড়া।এর সাথে আরো অনেক স্মৃতিতে অন্য বর্নের প্রতি ও কড়া আইন প্রনয়ন হয়েছে।কিন্তু মনুস্মৃতিতে আমরা তিন বর্ন ছাড়া এক বর্নের ক্ষেত্রে কঠোর ভাবে দেখতে পাই।তাছাড়া শূদ্র একটা ভিতর বাহির জাত,দেখবেন শাস্ত্রে অনেক ক্ষেত্রে অনেক ব্রাহ্মন শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন আবার অনেক ব্রাহ্মন শূদ্রত্ব হয়েছেন।আর এটাই অনেকে Ignore করে যায়।কারন শূদ্রত্ব প্রাপ্ত করার পিছনে কারন টা একটি রয়েছে।আপনি একটু মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করুন,শূদ্র সেই জাতিবিশেষ যাদের কঠিন পরিস্থিতি তে যেতে হয়।আর তাদের সেই অবস্থায় Survived করে স্বভাব ও গুনের অতিক্রমে পরের জন্মে সার্থক করতে হয়(এখানে বলে রাখি যে শূদ্রের বেদ অধ্যায়ন(পাঠ নই),সদগুরু হতে দীক্ষা,মন্ত্রহীন হোম,পূজা,ধর্মীয় অনুষ্ঠান করার অধিকার আছে)তাই তাদের কঠিন পরিস্থিতি তে যেয়ে এসব Survived করে উন্নিত হতে হয়।আর তখনই তারা গুনে উন্নিত হয়।আর এটাই কারন আলোচনার প্রেক্ষিতে।আর আইন কঠোরের।উদাহারনস্বরূপ:আমরা বলতে পারি যে,যে দেশের আইন যত কঠোর ও সুশৃঙ্খল তা সে দেশের মান্যতাটা আর উন্নয়ন টা বেশ প্রানবন্ত,তদ্রুপ বিষয়টা এমনই।শূদ্র ৬৪ কলা আয়ত্ত করে,যা মোটেও ঠুনকো ব্যাপার না,আর সাথে আছেই তিন বর্নের সহোযোগিতায়। তো সার্বিক বিবেচনায় এটাই মূল কারন।
শূদ্র কখনোই সমাজে তার নিচু স্তরের জন্য কলুষিত হয়নি।হ্যাঁ মধ্যযুগে ব্রাহ্মন্যবাদ একচেটিয়া বিস্তার লাভ করেছিলো,কিন্তু তার আগে না এবং বর্তমানেও না।কিন্তু বামপন্থী ও বির্ধমীরা সেই মধ্যযুগীয় পন্থা কে ধরে বসেই থাকে।
শূদ্রের নিয়ে সংশয় এর নিরসন
শূদ্ররা তিনবর্নের সাথে বসে খেতে পারবে না
:কে বলেছে পারবে না,অব্যশই পারবে,বাল্মিকী রামায়ন এই তার অকাঠ্য প্রমান আছে-বাল্মীকি রামায়ণে দেখা যাচ্ছে,
“নিমন্ত্রয়স্ব নৃপতীন্ পৃথিব্যাং যে চ ধার্মিকাঃ । ব্রাহ্মণান্ ক্ষত্রিয়ান্ বৈশ্যান্শূদ্রাংশ্চৈব সহস্রশঃ ॥ সমানয়স্ব সৎকৃত্য সর্বদেশেষু মানবান্ । মিথিলাধিপতিং শূরং জনকং সত্যবাদিনম্ ॥”
(বাল্মিকী রামায়ণ-১/১৩/২০,২১)
অর্থাৎ – মহর্ষি বশিষ্ঠ আদেশ দেন যে- ‘সহস্র সহস্র ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্রদের সমস্ত প্রদেশ থেকে সৎকারপূর্বক আমন্ত্রণ করো । তাঁদের শ্রদ্ধা-সৎকারপূর্বক ভোজন করাও, অশ্রদ্ধাপূর্বক নয় । এমন ব্যবহার করো যে সমস্ত বর্ণের লোকেরা সৎকার পেয়ে সমান সমাদরের অনুভব করে।’৷ ৷ ➡️ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র তাঁদের গুণের ফলে সুন্দর হন। ব্রাহ্মণ সুন্দর হন ক্ষমাগুণের ফলে, ক্ষত্রিয় সুন্দর হন বীরত্বে ও যুদ্ধে অপরাঙ্মুখতার ফলে, বৈশ্য সুন্দর হন সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের উন্নতি সাধন ও গোরক্ষার ফলে এবং শূদ্র সুন্দর হন তার শ্রমে,কর্মদক্ষতায় এবং বিশ্বস্ততা সহকারে তাঁর প্রভুর প্রসন্নতা বিধান করার ফলে। এইভাবে সকলেই তাঁদের গুণের দ্বারা সুন্দর হন।
শূদ্রকে অপবিত্র ও অস্পৃশ্য বলা হয়
কখনোই না,শূদ্র বিষ্ণুতূল্য।একটা বিষয় শূদ্র যদি অপবিত্র ও তুলনামূলক না হয় তাহলে পরব্রহ্মের চরনের দোষ হবে।শূদ্র চরন হতেই উৎপন্ন,সবাই চরনেই নমষ্কার নিবেদন করে,চরনের ধ্যান করে তাহলে কোন দিকে হতে শূদ্র অবহেলিত❓সত্যধর্মপরায়ণ শুদ্রদের ঋষি পরাশর বিষ্ণুতুল্য বলেছেন(পরাশরগীতা ৫/২৮)।অনুশাসনপর্ব ১৪৩/৪৮-৫১ এ মহাদেবের মতে শুদ্র জিতেন্দ্রিয় ও সদাচার হলে ব্রাহ্মণসদৃশ হন।মহাভারতে দুইজন শুদ্র মন্ত্রীর কথা জানা যায় এক মহামন্ত্রী বিদুর এবং দ্বিতীয় সঞ্জয় যিনি গবল্যণ নামক শূদ্রবংশে জন্মেছিলেন,তিনি মুনিগনের ন্যায় জ্ঞানী এবং ধৃতরাষ্ট্রের অন্যতম মন্ত্রী ছিলেন(মহা,আদি. ৬৩/৯৭)।
শূদ্রের ধর্মীয় কার্যে অধিকার নেই
শূদ্র না প্রত্যাক বর্নেরই অধিকার আছে ধর্মীয় কার্য করার।ধর্মীয় কার্য অনেকরকমের হয়।সনাতন ধর্মে কর্মযোগ,ভক্তিযোগ,জ্ঞানযোগ,ধ্যানযোগ,সাংখ্যযোগ,জ্ঞান-বিজ্ঞান ইত্যাদি যোগ এর দ্বারা ঈশ্বরের ধ্যান স্তব স্তুতি করা যায়।আর সবথেকে বড় বিষয় হলো,যত সমস্ত যোগ আছে তার মধ্য হতে ভক্তিযোগ শ্রেষ্ঠ ও অনন্য।ভক্তিযোগের অল্প ফলে অনেক বড় গতি প্রাপ্ত হওয়ার কথা গীতোপনিষদেই এসেছে।আর এটাই আশ্চর্যের বিষয় যে শূদ্র সহ সমগ্র বর্ন ভক্তিযোগ(অর্থ:অনন্য ও সর্বশ্রেষ্ঠ যোগের অভ্যাস করার অনুমতি আছে)
গীতোপনিষদ-২/৪০-
নেহাভিত্রুমনাশোহস্তি প্রত্যবায়ো ন বিদ্যতে। স্বল্পমপ্যস্য ধর্মস্য ত্রায়তে মহতো ভয়াৎ।।৪০।। অনুবাদঃ ভক্তিযোগের অনুশীলন কখনও ব্যর্থ হয় না এবং তার কোনও ক্ষয় নেই। তার স্বল্প অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠাতাকে সংসাররূপ মহাভয় থেকে পরিত্রাণ করে।
এবার আবারো দেখাবো কেথায় ভগবান সবাইকে অনুমতি দিয়েছেন।
মাং হি পার্থ ব্যপাশ্রিত্য যেহপি স্যুঃ পাপযোনয়ঃ। স্ত্রিয়ো বৈশ্যাস্তথা শূদ্রাস্তেহপি যান্তি পরাং গতিম্।।৩২।অনুবাদঃ হে পার্থ! যারা আমাকে বিশেষভাবে আশ্রয় করে, পাপযোনী,স্ত্রী, বৈশ্য, শুদ্র আদি নীচকুলে জাত হলেও অবিলম্বে পরাগতি লাভ করে।। হ্যাঁ এখানেই প্রমানিত যে শূদ্র সহ সকল বর্নের ধর্মের চর্চা ও সর্বশ্রেষ্ঠ মার্গ অভ্যাসের অধিকার আছে। গীতোপনিষদ-৯/৩২
শূদ্রের বেদাধিকার নেই,বেদ চর্চার অধিকার নেই
কে বলেছে? শূদ্রের ভক্তিমার্গে থাকলে কর্মকান্ডে থাকবে না কেন? আসলে একটু লড়ে চড়ে বসুন,খুব মজার বিষয় আপনাদের বলতে যাবো,এটা অনেক বড় হিপোক্রেসি যা বামপন্থী+বির্ধমীরা বেশ চর্চা করে থাকেন। শূদ্রের বেদ পাঠে অনাধিকার! বেদাধিকার নেই।আরে বাবারে এইসব বলার আগে আপনারা সব সম্পর্কে একটু তো জানুন ভাই।তো আমরা সাজিয়ে বলি,
1️⃣ বেদাধিকার চর্চার জন্য উপনয়ন ও সংষ্কার এর প্রয়োজন
2️⃣ তারপরে সংষ্কার ও উপনয়ন হলে তা নিশ্চিত
3️⃣ তাও যদি না হয়(মন্ত্রকে সুর ও ছন্দ বিহীন বেদের অধ্যায়ন করা যায়,অর্থ বললে গড়গড়িয়ে Reading পড়ার মতো)
4️⃣ অধ্যায়ন,অধ্যাপনা যোজন,পাঠ যেগুলো বেদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সব আলাদা।
এবার আপনাদের সাজিয়ে দিলাম।এখন প্রশ্ন শূদ্রের উপনয়ন ও সংষ্কার হচ্ছেনা কেন❓এখানে বিষয় হলো গুন ও কর্ম।স্বভাজাত ও গুন অতিক্রম করা যায়,কিন্তু তার জন্য অতিক্রম করলেও উপনয়ন হওয়া যায় না।সংষ্কার প্রাপ্ত করা যায় না।অনেকে বলে দেওয়া যায়।হ্যাঁ বিষয়টি দেওয়া যায় ও যায়না এরকমই চলে।তবে এটা সাইডে রেখে পরিষ্কার করে সোজা কথায় বললে তমঃ গুনের কারনে এটি হয়না।যা স্বভাব ও গুন।তা স্বভাব গুনকে অতিক্রম করা যায়।করে তারপর বিষয়।এটাই বাম এবং বির্ধমীরা সাজিয়ে বলে না।এখন আমরা এখানে এসব বললে,শূদ্রের অধ্যায়ন বা বাকীবিষয় নির্দেশ আছে তা কোথায় পেলাম।মহাভারতের ভীষ্মপর্ব ৬৬/৩৯ মতে যথাবিধি দীক্ষা পূর্বক ব্রাহ্মণাদি দ্বিজাতির সাথে শুদ্রকেও সাত্বতবিধিতে শ্রীমাধবের পূজাদি করার উপদেশ ভীষ্মদেব দিয়েছেন।আবার শান্তিপর্ব ৩১৬/৪৭এ বর্ণিত হয়েছে যে”সভায় ব্রাহ্মণকে পুরোভাগে স্থাপন করিয়া চারিবর্ণকেই বেদ শ্রবণ করাইবে”অর্থাৎ দ্বিজাতির সাথে শুদ্রও ব্রাহ্মণদিগদের নিকট স্বর ও মুদ্রারহিত বেদাদি শ্রবণ করতে পারেন।যজুর্বেদ ২৬/২ এ শুদ্র সহ নির্বিশেষ সকলকে বেদজ্ঞান দানের উপদেশ আছে –
यथे॒मां वाचं॑ कल्या॒णीमा॒वदा॑नि॒ जने॑भ्यः। ब्र॒ह्म॒रा॒ज॒न्या᳖भ्या शूद्राय॒ चार्या॑य च॒ स्वाय॒ चार॑णाय च। प्रि॒यो दे॒वानां॒ दक्षि॑णायै दा॒तुरि॒ह भू॑यासम॒यं मे॒ कामः॒ समृ॑ध्यता॒मुप॑ मा॒दो न॑मतु ॥२ ॥
আমি যেমন লোকদের কাছে এই ভাল কথা বলেছি। ব্রহ্মরাজ্য, শূদ্র, চর্যা এবং স্বয়চরণ। আপনি দেবতাদের প্রিয় হোন এবং আমাকে এই পৃথিবীতে উপহার দিন এবং আমার ইচ্ছা পূর্ণ হোক এবং আমি আপনাকে প্রণাম করি।
যেহেতু শূদ্রদের প্রবৃত্তিগত বা স্বভাবজাত কর্ম হল পরিচর্যাত্মক কর্ম (সেবা কর্ম ও সহায়তা কর্ম) যা একটি সূক্ষ্মতম সামাজিক দায়িত্ব, তাই এই গুরু দায়িত্বের বাইরে থেকে সময় বের করে বেদচর্চা করা খুব অসুবিধাজনক! যার জন্য বিধি প্রদত্ত স্মৃতিশাস্ত্র গুলিতে শূদ্রদের বেদচর্চা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শুক্ল-যজুর্বেদ সংহিতা ২৬.২ তে শূদ্রদেরও বেদচর্চার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অতয়েব শূদ্র চাইলে বেদও পাঠ করতে পারে।আপস্তম্ব ধর্মসূত্র হল কৃষ্ণ-যজুর্বেদীয় বেদাঙ্গ কল্প সমূহের মধ্যে অন্যতম। আপনারা জানলে অবাক হবেন উক্ত কল্পটি শেষই হয়েছে (অন্তিম অংশে) নারী ও শূদ্রের গুরুত্বপূর্ণতা ব্যাখ্যা করতে করতে। আপস্তম্ব ধর্ম সূত্রম ২.১১.২৯.১১ থেকে বর্ণিত। যে জ্ঞান, যা শূদ্র ও নারী অধিকারী, ইহা সম্পূর্ণতা(পরিপূরণ)সব অধ্যয়নেআপস্তম্ব ধর্ম সূত্রম ২.১১.২৯.১২ থেকে বর্ণিত। তাহা(এই জ্ঞান) ঘোষণা করে যে এই জ্ঞান সম্পূরক অথর্ব্বেদেরআপস্তম্ব ধর্ম সূত্রম ২.১১.২৯.১৫ থেকে বর্ণিত।কিছু ঘোষণা যা অবশিষ্ট দায়িত্ব, যা এখানে(উক্ত কল্পসূত্রে) শেখানো হয়নি, তা অবশ্যই শিখতে হবে নারী এবং চতুবর্ণের(ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রের) কাছে হতে।
হ্যাঁ,এবার আমরা গুছিয়ে একটা অনেক বড় বিষয়কে সুন্দর করে উপস্থাপন করার চেষ্ঠা করেছি,শূদ্র প্রসঙ্গে আরো অনেক পোস্ট আসবে,তবে এটাই সুন্দর সূচনা।
শূদ্র এর দাস বিক্রী বা দাসপ্রথা
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে যে শূদ্র এর দাস বিক্রী বা দাসপ্রথা।দাসপ্রথা নিয়েও আপত্তি করা হয়।তা এই বিষয়টা কতটুকু সত্য।
মেগাস্থীনিস এর ইন্ডিকাস এর বিবরনে আমরা দেখি প্রাচীন ভারতে দাসপ্রথা বলতে কিছুই ছিলে না।তা আমো দেখবো-
sixty gates. The same writer tells us further this remarkable fact about India, that all theI ndians are free, and not one of them is a slave. The Lakedæmonians and the Indians are here so far in agreement. The lakedæmonians, however, hold the Helotsas slaves, and these Helots do servile labour; but the Indians do not even use aliens as slaves, and much less a countryman of their own.(Megastinis indica’s,page no 68-69).
হ্যাঁ,আবার আরো একটি বিষয় তা হলে অনেক প্রকার দাসত্ব নিয়ে,মূলত দাসত্ব এর যে বিবরন আমরা দেখি তা বিকৃত।বিকৃতভাবেই উপস্থাপন করেন।তা এই নিয়ে –
পক্ষান্তরে “মনুসংহিতা” থেকে তৎকালীন ভারতীয় সমাজের যে চিত্র পাওয়া যায়, এবং বিশেষ করে ঐ গ্রন্থের অষ্টম অধ্যায়ে শূদ্র সম্পর্কে যে সমস্ত শ্লোক রয়েছে তাতে দেখা যায় যে, “শূদ্র মাত্রই দাস্যকর্মের উপযুক্ত” এই কথাই বলা হয়েছে। শূদ্র মাত্রই দাস এ কথা বলা হয়নি। এ প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় তা হল, সংস্কৃত “দাস” শব্দের দ্বারা কেবল ক্রীতদাস বোঝায় না, সাধারণ গৃহভৃত্যকেও বোঝায়। বৃহদর্থে যে কোনো বেতনভোগী কর্মচারীও দাস। “দাসী বা দাসপত্নীতে শূদ্রের যে পুত্র হয়, ঐ পুত্র শূদ্র পিতার অনুজ্ঞামতে উহার ঔরস-পুত্রের তুল্যভাগী হইবে, ইহাই শাস্ত্রীয় বিধান” (৯/১৭৯)। মনুসংহিতার উপরিউক্ত শ্লোক প্রমাণ করেছে যে, শূদ্রেরও দাসদাসী ছিল বা থাকা সম্ভব ছিল। কাজেই শূদ্র মাত্রই দাস ছিল, মার্কসবাদীদের এই সিদ্ধান্ত সত্যের অপলাপ ও ইতিহাসের বিকৃতিকরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ছাড়া উক্ত গ্রন্থের দশম অধ্যায়ে শূদ্রের অনেক স্বাধীন পেশার উল্লেখ আছে, কিন্তু ক্রীতদাসের কোনো স্বাধীন পেশা থাকা সম্ভব নয়।
“বৈশ্যের অভাবে শূদ্রগৃহ হইতে (ব্রাহ্মহ্মণ) ইচ্ছামত দুই বা তিনটি যজ্ঞীয় দ্রব্য গ্রহণ করিবে” (১১/১৩)। “যজ্ঞের নিমিত্ত শূদ্রের নিকট ধন যাচ্ঞা করা ব্রাহ্মণের উচিত নয়” (১০/২৪)। “যদি পশুযাগ ও সোমযাগ না হইয়া থাকে তবে তদুদ্দেশ্যে শূদ্র হইতেও ধন গ্রহণ করিয়া ব্রাহ্মণ বংসরান্তে বৈশ্বানরী ইজি করিবেন” (১১/২৭)।- ইত্যাদি শ্লোকগুলি অকাট্যভাবে স্বাধীন ও বিত্তশালী শূদ্রের অস্তিত্ব স্বীকার করছে। ক্রীতদাসের কাছে কেউ আর্থিক সাহায্য চাইতে পারে না এবং তাদের কোনো স্বাধীন গৃহও থাকা সম্ভব নয়।
“…অনুপযুক্ত ব্রাহ্মণকে রাজা ধর্মপ্রবক্তাপদে নিযুক্ত করিতে পারেন, পরন্ত সর্বগুণান্বিত ধার্মিক ও ব্যবহারজ্ঞ শূদ্রকে ঐ পদে নিযুক্ত করিতে পারেন না। যে রাজার সামনে শূদ্র ন্যায়ান্যায় ধর্ম বিচার করে সেই রাজার রাষ্ট্র শীঘ্রই পঙ্কে পতিত গোরুর ন্যায় অবসন্ন হয়” (৮/২০, ২১)। এইশ্লোক থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ধার্মিক, বিদ্বান বা রাজার অমাত্যপদে আসীন হবার মত সর্বগুণান্বিত শূদ্রও বিরল ছিল না। তা ছাড়া মহাভারতে শূদ্র রাজার কন্যা সত্যবতীর সঙ্গে শান্তনুর বিবাহ এবং শূদ্র রাজাদের সসৈন্যে কুরুক্ষেত্রে যোগদান, স্বাধীন শূদ্র রাজার অস্তিত্ব প্রমাণ করে।
কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্রে লিখেছেন, “কোন ম্লেচ্ছ যদি তার সন্তানকে দাস হিসাবে বিক্রি করে বা বন্ধক রাখে তবে তা দণ্ডনীয় হবে না। তবে আর্যদের মধ্যে যে কোন রকমের দাসত্বপ্রথা সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ” (৩/১৩/৩৪) পণ্ডিতগণের মতে ম্লেচ্ছ শব্দের দ্বারা বিদেশী বোঝায় এবং শূদ্র কিংবা তার থেকেও পতিত (অশাস্ত্রীয় বিবাহের দ্বারা) কোনো ব্যক্তিও আর্য বলে গণ্য। যে কোন মার্কসবাদী উক্ত গ্রন্থের উক্ত প্রকরণে বর্ণিত ক্রীতাদাস বিষয়ে আলোচনা পড়লে বুঝতে পারবেন যে ভারতীয় সমাজ কত সভ্য ও মানবিক ছিল। ইয়োরোপ যেখানে ক্রীতদাসকে না খেতে দিয়ে মেরে ফেলার কথা বলছে, কৌটিল্য সেখানে বলছেন যে, নাবালক ম্লেচ্ছ ক্রীতদাসকেও যদি তাঁর মালিক কোনো নোংরা কাজে নিযুক্ত করে তবে সেই মালিকের অর্থদণ্ড হবে। রোমের লেখকরা ক্রীতদাসীদের গণিকাবৃত্তি করতে বলছেন, পক্ষান্তরে কৌটিল্য বলছেন, ক্রীতদাসীর সঙ্গে কোনো রকম অশালীন কথা বললে বা ইঙ্গিত করলে তার দণ্ড হবে (৩/১৩/১১,১২)।
মনুসংহিতায়, সাত রকম দাসের বর্ণনা আছে, যেমন (১) যুদ্ধবন্দী দাস, (২) অন্নের জন্য দাস, (৩) গৃহস্থ দাসীর পুত্র দাস, (৪) দদ্রিম বা অন্য কেউ দিয়েছে এমন দাস, (৫) পৈতৃক বা পিত্রাদিক্রমাগত দাস, (৬) দণ্ডদাস বা রাজার শাস্তিস্বরূপ দাস্যবৃত্তি করছে এমন, এবং (৭) ক্রীত বা পয়সা দিয়ে কেনা দাস; (৮/৪১৫)। এর মধ্যে একমাত্র ‘ক্রীত’ শ্রেণির দাসই ইয়োরোপের ক্রীতদাসের পর্যায়ে পড়ে। কাজেই ইয়োরোপের মত ক্রীতদাসের হাটে হাজার হাজার দাস কেনা-বেচার ঘটনাও ভারতে অনুপস্থিত। ইত্যাদি আরও নানা তথ্য-প্রমাণ হাজির করে দেখানো যেতে পারে যে ইয়োরোপের মত জঘন্য ক্রীতদাস প্রথা ভারতে কোনো কালেই ছিল না। এই কারণে মেগাস্থিনিস তাঁর বিবরণে লেখেন যে, ভারতে ক্রীতদাস প্রথা নেই।
আরও একটা কথা এখানে বলে রাখা যুক্তিযুক্ত হবে যে, শুধু ভারতের নয়, পাশ্চাত্যের, বিশেষ করে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার পণ্ডিতরাও ভারতে ক্রীতদাস প্রথার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে বিশেষ চেষ্টা চালায়। কিন্তু মেগাস্থিনিসের মন্তব্য তাদের সকল অপচেষ্টায় জল ঢেলে দেয়। মেগাস্থিনিসের মন্তব্য উপেক্ষা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না, কারণ সে একজন ইয়োরোপীয়। দ্বিতীয়তঃ, মেগাস্থিনিস ইয়োরোপীয় ক্রীতদাস প্রথার একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। এই সব ঘটনা থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে, শ্রীডাঙ্গে সহ আমাদের মার্কসবাদী বুদ্ধিজীবীদের ভারতচর্চা, নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে ইতিহাসকে বিশ্লেষণ করে সত্য উদ্ঘাটনের প্রচেষ্টা নয়, বরং গায়ের জোরে ইতিহাসকে বিকৃত করে তাকে মার্কসবাদী তত্ত্বের উপযোগী করে তোলার অপচেষ্টা মাত্র। এ থেকে আরও একটা জিনিস প্রমাণ হয় তা হল, নিজের দেশের ইতিহাস, সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা নেই, তাদের যত শ্রদ্ধা সব শুধু বিদেশী মার্কস ও তাঁর তত্ত্বের প্রতি। পাঠক যদি শ্রীডাঙ্গের উল্লিখিত পুস্তকটি সংগ্রহ করে একবার পড়েন তবে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি কালিমা লেপন করার মার্কসবাদী কায়দার সঙ্গে কিছুটা পরিচিত হতে পারবেন। রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, উপনিষদ ইত্যাদি আমাদের প্রাচীন গ্রন্থাদিরও যে কি রকম কুৎসিত অপব্যাখ্যা মার্কসবাদীরা করতে পারে সে সম্বন্ধেও কিছুটা ধারণা করতে পারবেন। তবে সুখের কথা হল, হিমালয়কে গাঁইতি দিয়ে আঘাত করলে যেমন হিমালয়ের কিছু যায় আসে না, বরং যেগাঁইতি মারে তারই পরিশ্রম সার হয়, সেই রকম গীতা, উপনিষদ ইত্যাদিকে আঘাত করে মার্কসবাদীরা শুধু তাদের গা-হাত-পা ব্যথা করছেন। হিমালয় যেমন ছিল তেমনই আছে। পোকা যেমন গ্রন্থের মহত্ত্ব বোঝে না, শুধু কাটে, আমাদের মার্কসবাদী অজ্ঞের দলও সেই রকম গ্রন্থের মহত্ত্ব না বুঝে পোকার মত কেটে চলেছে।(সূত্র:মাক্স ও মাক্সবাদীর অজ্ঞতা,ভারতে ক্রীতদাস প্রথা ছিলো না।পৃষ্ঠা:১৮-১৯-২০)
সর্বোপরি এই সিন্ধান্তে শূদ্র জাতিদের বিশেষ কিছু আক্ষেপ নিয়ে অনেক তূলনামূলকভাবেই আলোচনা করা হলো।আর এভাবেই প্রত্যাক আক্ষেপের সাথে এইভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্ঠা করবো।