শ্রুতি ও স্মৃতি কি পুরাণকে মান্যতাহীন বলেছে?

শেয়ার করুন

ভূমিকা:- এমন অযৌক্তিক কথা দুই শ্রেনীর ব্যক্তিই বলতে পারে। যাদের শাস্ত্র নিয়ে ব্যবসায়িক মনোভাব আছে এবং যারা আসলে কখনো শাস্ত্র অধ্যায়ন করে দেখেনি। ঠিক তারাই বলবে যে পুরাণকে শ্রুতি,স্মৃতি মান্যতাহীন বলেছে। কেননা পুরাণকে মান্যতা দিতে গেলে শাস্ত্র নিয়ে ব্যবসা প্রায় তাদের বন্ধ হয়ে যাবে। আবার কিছু কিছু ব্যক্তি শাস্ত্র না অধ্যায়ন করেই প্রচার করে যে পুরাণ ধর্মীয় শাস্ত্র নয়। আজকে এই মঞ্চে শ্রুতি, স্মৃতি থেকে প্রমাণ করা হবে যেমন বেদ, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক উপনিষ , রামায়ণ, মহাভারত ও বিভিন্ন সংহিতা থেকে পুরাণকে স্বতন্ত্র শাস্ত্র হিসেবে উল্লিখিত রয়েছে। এবং সনাতনীদের বিভিন্ন আচার্যগণ পুরাণকে স্বতন্ত্র শাস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করেছে।

চলুন শাস্ত্র থেকে পর্যবেক্ষণ করি

 

শ্রুতি শাস্ত্র সমূহ থেকে প্রমাণ

 

  • সংহিতা থেকে প্রমাণ 

অথর্ববেদের দুইটি মন্ত্রে স্পষ্ট পুরাণ শাস্ত্রকে মান্যতা দিয়েছে। একটি মন্ত্রে ঋক্‌সমূহ, সামসমূহ, ছন্দসমূহের মতোই পুরাণ শাস্ত্রকে ঈশ্বরের মুখের উচ্ছিষ্ট বলে উল্লেখ করেছে। অথাৎ পুরাণ শাস্ত্র ব্রহ্ম থেকে উৎপন্ন হয়েছে।

প্রমাণ নং:-১

তিনি বৃহৎ-ব্যপ্ত দিকের অনুগমন করলেন। তাকে অনুসরণ করল ইতিহাস, পুরাণ, গাথা, নারাশংসী- এসব বিষয়সমূহ (বেদভাগ)। যিনি এভাবে তাকে জানেন তিনি ইতিহাস, পুরাণ, গাথা ও নারাশংসীর প্রিয় ধাম লাভ করেন।

প্রমাণ নং:-২

 

 

  • ব্রাহ্মণ থেকে প্রমাণ

শতপথ ব্রাহ্মণ ও গোপথ ব্রাহ্মণ পুরাণকে মান্যতা দিয়েছেন। যেমন শতপথ ব্রাহ্মণের ১৩/৪/৩/১২ উল্লেখ করেছেন, এসব বিষয়ের নির্দেশ তিনি (অধ্বর্যু) দেন—ইতিহাস হচ্ছে বেদ, এটি তাই এভাবে বলে তিনি ইতিহাসের কিছু বিষয় বলবেন। তারপর ১৩ নং মন্ত্রটিতে বলেছেন, তিনি (অধ্বর্যু) তাদের নির্দেশ দেন—‘পুরাণ-ই হচ্ছে বেদ’ এটি তাই এভাবে বলে তিনি পুরাণের অংশবিশেষের পুনরুচ্চারণ করবেন। শতপথ ব্রাহ্মণেও পুরাণ শাস্ত্রকে বেদ হিসেবে বিবেচনা করেছে।

প্রমাণ নং:- ৩

গোপথ ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে যে, সেই প্রমথিত, প্রতপ্ত ও সন্তপ্ত (দিকসমূহ) থেকে পঞ্চবেদ নির্মাণ করলেন। সেগুলি হল—সর্পবেদ, পিশাচবেদ, অসুরবেদ, ইতিহাসবেদ ও পুরাণবেদ।

প্রমাণ নং:-৪

 

 

  • আরণ্যক থেকে প্রমাণ

যে ঋক্-সমূহের (পাদবদ্ধ মন্ত্রসমূহের) অধ্যয়ন করা হয়, সেই স্বাধ্যায় ক্রিয়া দেবতাদের পয়ঃ আহুতিস্বরূপ (দুগ্ধ আহুতিস্বরূপ) হয়। যে যজুঃসমূহের (গদ্য মন্ত্রসমূহের) অধ্যয়ন করা হয়, সেই স্বাধ্যায় ক্রিয়া ঘৃতাহুতিস্বরূপ হয়। যে সামসমূহের (অর্থাৎ গেয়াত্মক মন্ত্রসমূহের) অধ্যয়ন করা হয়, সেই স্বাধ্যায় ক্রিয়া সোমাহুতিস্বরূপ হয়। যে অথবা ও অঙ্গিরসের দৃষ্ট মন্ত্রসমূহের (অথর্ববেদের) অধ্যয়ন করা হয়, সেই স্বাধ্যায় ক্রিয়া মধুর আহুতিস্বরূপ হয়। যে ব্রাহ্মণগ্রন্থের, (মহাভারতাদি) ইতিহাস গ্রন্থের, (ব্রহ্মাণ্ডাদি) পুরাণগ্রন্থের, কল্পসূত্রের, গাথা (নামক মন্ত্রবিশেষের), নরাশংসযুক্ত পদবিশিষ্ট মন্ত্রসমূহের অধ্যয়ন করা হয়, তা (সেই স্বাধ্যায় ক্রিয়া) দেবতাদের নিকট মেদাহুতি স্বরূপ হয়েছিল।

প্রমাণ নং:-৫
যজুর্বেদ তৈত্তিরীয় আরণ্যক ২।৯ এখানে ভট্টভাস্কর মহাভারত ও ব্রহ্মাণ্ডাদি পুরাণের কথা বলেছেন।এখানেই স্পষ্ট হয় যে , ব্রহ্মাণ্ডাদিকেই পুরাণ বলা হয়।

[এখানেও চাইলে খেয়াল করতে পারেন, ব্রাহ্মণ গ্রন্থ, ইতিহাস, পুরাণ সব আলাদা আলাদা উল্লেখ করা হয়েছে। যারা নিজেদের স্বার্থের খাতিরে দাবী করে ব্রাহ্মণ আর পুরাণ একই, তারা ঠিক কিসের ভিত্তিতে এসব আজগুবি প্রচার করে, তা জানা নেই।]

 

 

  • উপনিষদ থেকে প্রমাণ

উপনিষদ একটি নয় কয়েকটি মন্ত্রেই সরাসরি পুরাণের কথা উল্লেখ রয়েছে। যেখানে প্রজ্জ্বলিত অগ্নি থেকে নানাবিধ ধূম বিনির্গত হয়, তেমনি ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ, ইতিহাস, পুরাণ, বিদ্যা, রহস্যবিদ্যা, শ্লোকসকল, সূত্রসমুদয়, অনুব্যাখ্যাসকল ও ব্যাখ্যাসমূহ—এই সমস্তই এই পরমাত্মার নিঃশ্বাস (সদৃশ)।

প্রমাণ নং:- ৬

‘যাজ্ঞবল্ক্য, প্রজ্ঞা কাকে বলে?’ ‘সম্রাট, বাগিন্দ্রিয়ই প্রজ্ঞা৷ সম্রাট, বাকেরই দ্বারা বন্ধুকে জানা যায়। সম্রাট, বাকেরই দ্বারা ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ, ইতিহাস, পুরাণ, বিদ্যা, রহস্যবিদ্যা, শ্লোকসকল, সূত্রসমুদয়, অনুব্যাখ্যাসকল ও ব্যাখ্যাসমূহ; যাগ, হোম, অন্নদান ও জলদানের ফল; ইহজন্ম ও পরজন্ম; এবং নিখিল প্রাণিবৃন্দকে জানা যায়৷

প্রমাণ নং:- ৭

আর আদিত্যের উত্তরভাগে যে কিরণপুঞ্জ আছে, তারাই মধুচক্রের উত্তরদিকঙ্কিত মধুচ্ছিত্র অথর্ববেদোক্ত মন্ত্ররাশিই মধুকর। ইতিহাস-পুরাণসম্বন্ধী কর্মই পুষ্পা কর্ম থেকে সংগৃহীত অনতরাশিই পুষ্পের রস ।

প্রমাণ নং:- ৮

অথর্ববেদোক্ত সেই মন্ত্র সকল এই ইতিহাস-পুরাণকে উত্তপ্ত করল। উত্তপ্ত সেই ইতিহাস-পুরান থেকে যশ, দেহকান্তি, ইন্দ্রিয়পটুতা, বল, ও ভক্ষণীয় অন্ন রূপ নিঃসারিত হল ৷

প্রমাণ নং:-৯

বাক্ অবশ্যই নামের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। বাক্ই ঋগ্বেদকে জানিয়ে দেয়, যজুর্বেদ, সামবেদ, চতুর্থবেদ অথর্ববেদ, পঞ্চমবেদ ইতিহাস-পুরাণ, ব্যাকরণ, শ্রাদ্ধতত্ব, গণিত, দৈবোৎপাতবিষয়কবিদ্যা, মহাকালাদিনিধিবিদ্যা, তর্কশাস্ত্র, নীতিশাস্ত্র, শিক্ষা ও কল্পাদি, ভূতবিদ্যা, ধনুর্বেদ, জ্যোতিষ, সর্পবিদ্যা, গন্ধর্বশাস্ত্র,দ্যুলোক,পৃথিবী, আকাশ, জল, তেজ, দেবগণ, মনুষ্যগণ, পশুসকল, তৃণ ও বনস্পতিরাজি কীট পতঙ্গ ও পিপীলিকা সহ হিংস্রজন্তুগণ পুণ্য ও পাপ, সত্য ও মিথ্যা, শুভ ও অশুভ, মনোরম ও অমনোরম― (এই সমস্তই বাক্ জানিয়ে দেয়)।

প্রমাণ নং:- ১০

হে ভগবন, আমি ঋগ্বেদ জানি। হে ভগবন, আমি যজুর্বেদ, সামবেদ, চতুর্থস্থানীয় অথর্ববেদ, পঞ্চমস্থানীয় ইতিহাস-পুরাণ, ব্যাকরণ, শ্রাদ্ধতত্ব, গণিত, দৈব উৎপাতবিষয়কবিদ্যা, মহাকালাদিনিধিশাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র, নীতিশাস্ত্র, শিক্ষাকল্পাদি বেদাঙ্গ, ভূতবিদ্যা, ধনুর্বেদ, জ্যোতিষ, সর্পবিদ্যা, ও গন্ধর্বশাস্ত্র — এই সমস্তই জানি৷

প্রমাণ নং:- ১১

বিজ্ঞানের দ্বারা (লোক) ঋগ্বেদ জেনে থাকে। যজুর্বেদ, সামবেদ, চতুর্থবেদ অথর্ববেদ, পঞ্চমবেদ ইতিহাস-পুরাণ, ব্যাকরণ, শ্রাদ্ধতত্ব, গণিত, দৈবোৎপাতবিষয়কবিদ্যা, মহাকালাদিনিধিবিদ্যা, তর্কশাস্ত্র, নীতিশাস্ত্র, শিক্ষা ও কল্পাদি, ভূতবিদ্যা, ধনুর্বেদ, জ্যোতিষ, সর্পবিদ্যা, গন্ধর্বশাস্ত্র, দ্যুলোক, পৃথিবী, বায়ু, আকাশ, জল, তেজ, দেববৃন্দ, মনুষ্যসকল, পশুসকল, পক্ষিগণ, তৃণ ও বনস্পতিরাজি, কীট, পতঙ্গ ও পিপীলিকা সহ হিংস্ৰজগুগণ, (শাস্ত্রদর্শিত) পুণ্য ও পাপ, সত্য ও মিথ্যা, শুভ ও অশুভ, মনোরম ও অমনোরম, অন্ন ও আস্বাদ, ইহলোক ও পরলোককে বিজ্ঞানের দ্বারাই জানা যায়।

প্রমাণ নং:-১২

শ্রুতি শাস্ত্রনুমোদিত পুরাণ, এই পুরাণ শাস্ত্রকে শ্রুতি শাস্ত্র ঈশ্বরের মুখনিঃসৃত বাণী হিসেবে বিবেচনা করেছে। এবং পুরাণ শাস্ত্রকে পঞ্চম বেদ বলে উল্লেখ করেছে। এবং পুরান ও বেদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এখন যারা ব্যবসার জন্যে পুরাণ সমগ্রঃকে মানতে চাচ্ছেন না তারা কি আদৌ শ্রুতি শাস্ত্র সমূহকে মান্যতা দেয়। শ্রুতি শাস্ত্র সমূহকে মান্যতা দিলে অবশ্যই ব্যবসা লস হলেও পুরাণ শাস্ত্রকে মান্যতা দিতে হবে। এইক্ষনে শ্রুতি থেকে প্রমাণ হয়েছে যে পুরাণ শাস্ত্র শ্রুতি শাস্ত্রনুমোদিত। নিচে স্মৃতি শাস্ত্র থেকে প্রমাণিত করা হয়েছে যে পুরাণ শাস্ত্র স্মৃতি শাস্ত্রনুমোদিত।

 

 

স্মৃতি শাস্ত্র সমূহ থেকে প্রমাণ

ব‍্যাস স্মৃতি, যাজ্ঞবাল্ক‍্য স্মৃতি, মনু স্মৃতি সহ রামায়ন এবং মহাভারতে স্পষ্ট পুরাণ শাস্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। এবং স্মৃতি শাস্ত্রে পুরাণকে স্বতন্ত্র আলাদা শাস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ব্যাসস্মৃতি ১/৪ ব্যাসদেব বলেছেন যে, যেখানে শ্রুতি, স্মৃতি ও পুরাণের বিরোধ দেখা যায়, সেখানে শ্রুতিকথিত বিধিই বলবান এবং যেস্থলে স্মৃতি ও পুরাণের বিরোধ দেখা যায়, সেস্থলে স্মৃতিকথিত বিধিই বলবান।

এখানে ভালো ভাবে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন পুরাণ আলাদা স্বতন্ত্র শাস্ত্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। যেমন শ্রুতি,স্মৃতি,পুরাণ তিনটি শাস্ত্রের কথা উল্লেখ করেছে। শাস্ত্র নিয়ে ব্যবসায়িক দল গুলো পুরাণ শাস্ত্রকে বাদ দেওয়ার জন্যে সাধারণ সনাতনীদের এমনটা বুঝিয়ে বলে যে, পুরাণ কোনো আলাদা স্বতন্ত্র শাস্ত্র নয়। ব্রাহ্মণ,আরণ্যক, উপনিষদকেই মূলত বেদ শাস্ত্রে পুরাণ বলে উল্লেখ করেছে। কিন্তু তাদের এই দাবী আমরা শাস্ত্র থেকে পর্যবেক্ষণ করবো। {কেননা মনুস্মৃতি ৬/২৯ নং শ্লোকে উপনিষদকে শ্রুতি হিসেবে বিবেচনা করেছে । মীমাংসাদর্শনের শাবরভাষ্যে (২/১/৩৩) উল্লেখ আছে “মন্ত্রশ্চ ব্রাহ্মণ্যশ্চ বেদঃ” অর্থাৎ, মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ মিলেই বেদ। এবং যাজ্ঞ্যবাল্ক্য স্মৃতি (১/১৪৫, ৩/১১০ ও ৩০৯) বেদাংশ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।} উক্ত প্রমাণ গুলোতে মূলত ব্রাহ্মণ,আরণ্যক, উপনিষদকে শ্রুতিই বলেছে। তাহলে অপসংস্কৃতির দল গুলো ব্রাহ্মণ,আরণ্যক, উপনিষদ শ্রুতি শাস্ত্র গুলোকে পুরাণ শাস্ত্র বলে। আলাদা স্বতন্ত্র পুরাণ শাস্ত্রকে নিয়ে ব্যবসার জন্যে অপপ্রচার করছে। কিন্তু এই ব্যাসস্মৃতির ৪/১ ব্যাসদেব বলেছেন যেখানে শ্রুতি, স্মৃতি ও পুরাণের বিরোধ দেখা যায়, সেখানে শ্রুতিকথিত বিধিই বলবান। অর্থাৎ, ব্রাহ্মণ,আরণ্যক, উপনিষদ যদি পুরাণ শাস্ত্রোই হতো তাহলে এখানে শ্রুতির সাথে স্মৃতির বিরোধ হলে শ্রুতিই বলবান বলে উল্লেখ থাকতো না। কেননা উপরের { চিহ্নিত } প্রমাণে ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদকে বেদ হিসেবে উল্লেখ করেছে। আবার

ব‍্যাস সংহিতা ৪/৪৫ তে বলা হচ্ছে বেদ পারঙ্গদ হতে হলে পুরান পাঠ একান্ত আবশ্যক।

প্রমাণ নং:-১৩

 

  • যাজ্ঞ্যবাল্কস্মৃতি থেকে প্রমাণ

বেদের সাথে সাথে পুরানকে বিদ‍্যার স্থান বলা হয়েছে। যেমণ বেদ থেকে আমরা জ্ঞান,বিদ্যা যেভাবে আহরণ করি। ঠিক তদ্রুপ পুরাণ শাস্ত্র থেকে জ্ঞান,বিদ্যা সেভাবে আহরণ করতে বলা হয়েছে। এবং বেদের সাথে সাথে পুরাণ শাস্ত্র থেকে পুরুষের সাধন জ্ঞান এবং ধর্মপ্রবৃত্তির কারণ বলে বিবেচিত করতে বলা হয়েছে ।

প্রমাণ নং:- ১৪

 

  • মনুস্মৃতি থেকে প্রমাণ

বেদের সাথে সাথে পুরান শাস্ত্রের কথাও শ্রবনের করতে বলেছে।

প্রমাণ নং:- ১৫

 

  • রামায়ণ থেকে প্রমাণ

প্রমাণ নং:-১৬

 

  • মহাভারত থেকে প্রমাণ

মহাভারতে বলা আছে যে, অল্প জ্ঞানিরা যখন বেদ ব‍্যাখা করে তখন বেদ ভাবে এই যে, অল্প জ্ঞানীরা অল্প বিদ্যা দিয়ে প্রহার করে। ইতিহাস (রামায়ন ও মহাভারত) এবং পুরাণ দ্বারা বেদকে বদ্ধিত করবে।

প্রমাণ নং:-১৭

 

বিভিন্ন আচার্যদের পুরাণ মান্যতা

  • চাণক্যের পুরাণ মান্যতা

চাণক্য দেব পুরাণ শাস্ত্রকে মান্যতা দিয়েছে।

প্রমাণ নং
                           প্রমাণ নং:- ১৮

 

 

  •  ভট্টভাস্করের পুরাণ মান্যতা

ভট্টভাস্কর মহাভারত ও ব্রহ্মাণ্ডাদি পুরাণের বলতে ব্রাহ্মণ ,আরণ্যক, উপনিষদের কথা বলেন নি। ভট্রভাস্কর মূলত ব্রহ্মাণ্ডাদি পুরাণের কথা উল্লেখ করেছেন।  মুখ্যতঃ ব্রহ্মাণ্ডাদিকেই পুরাণ বলা হয়।

                             প্রমাণ নং:- ১৯

 

 

  • শঙ্করাচার্যের পুরাণ মান্যতা

আমরা জানি,  শ্রীপাদ শঙ্করাচার্য্যের ব্রহ্মসূত্রের শারিরীক ভাষ্যে  ৪/১/১৩ তে শ্রীমদ্ভাগবতমের ১/২/২১ নাম্বার শ্লোক কোট করেছেন। এবং ৪/১/১৩ ভাষ্য করতে গিয়ে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান থেকে কোট করেছেন। তাহলে এখান থেকে আমরা এটা বুঝতে পারলাম যে অদ্বৈত আচার্য্য শ্রীপাদ শঙ্করাচার্য্য পুরাণ মানতেন।

                              প্রমাণ নং:- ২০

 

 

  • রামানুজাচার্যের পুরাণ মান্যতা

শ্রীপাদ রামানুজচার্য ব্রহ্মসূত্রের শ্রীভাষ্যের ৪/২/১ ভাষ্যতে বিষ্ণুপুরাণের কোট করেছেন। এখান থেকে প্রমাণিত হয় রামানুজ আচার্য পুরাণ মান্যতা দিয়েছেন।

                               প্রমাণ নং:- ২১

 

  • বৈষ্ণবাচার্য্য শ্রীমদ্বলদেব বিদ্যাভূষণের পুরাণ মান্যতা

গৌড়ীয় বৈষ্ণবাচার্য্য শ্রীমদ্বলদেব বিদ্যাভূষণ ব্রহ্মসূত্রের তাহার গোবিন্দ ভাষ্যের ৪/১/১৩ ভাষ্যতে ভাগবতমহাপুরাণের কোট করেছেন। তাহলে গৌড়ীয় বৈষ্ণবাচার্য্য শ্রীমদ্বলদেব বিদ্যাভূষণ পুরাণ মানতেন।

                           প্রমাণ নং:- ২২

আর এই দিকে শ্রীমধ্বাচার্য্য স্বয়ংই ভাগবত মহাপুরাণের ভাষ্য করেছেন। তাহলে তাহার পুরাণ না মানার মান্যতা কোন কারণ নেই। শুধু একটি গোষ্ঠী ব্যদিত। সনাতন ধর্মের সকল শাস্ত্রসমূহ এবং সকল মহাজনরা পুরাণের মান্যতা দিয়েছেন।  এই গোষ্ঠী যদি পুরাণ মান্যতা দিতে যায় । তাহলে তাদের ধর্ম ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে।  এই কারণে এই গোষ্ঠী ও এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এবং এদের থেকে অপপ্রচারের স্বীকার হয়ে কিছু সাধারণ সনাতনী পুরাণ শাস্ত্রকে মান্যতা দিতে নারাজ।  যেখানে শ্রুতি, স্মৃতি ও সনাতনীদের মহাজনগণ পুরাণ মান্যতা দিয়েছে। সেখানে এই গোষ্ঠীর অপপ্রচারের পুরাণ শাস্ত্রর মান্যতা দুর্বলতা হয় নি।

 

উপসংহার

পাঠক বৃন্দগণ নিরপেক্ষ থেকে বিবেচনা করুন। যেখানে শ্রুতি থেকে শুরু করে স্মৃতি শাস্ত্র সমূহ এবং রামায়ন ও মহাভারত ব্রহ্মাণ্ডাদি পুরাণকে স্বীকার করেছেন। এবং বিভিন্ন আচার্যরা পুরাণকে মান্যতা দিয়েছেন। সেখানে ধর্ম ব্যবসীরা তাদের ব্যবসা করতে অসুবিধা হবে দেখে পুরাণকে অস্বীকার করেন।  এবং সাধারণ সনাতনী যখন পুরাণ শাস্ত্রকে, শাস্ত্র বলে স্বীকৃতি দেন তখন সাধারণ সনাতনীদের পৌরাণিক বলে আখ্যা দিয়ে অপমান সূচনা করেন। কিন্তু বেদ পুরাণকে শাস্ত্র হিসেবে মান্যতা দিয়েছে। এখন বেদকেও কি পৌরাণিক বলে আখ্যা দিবে অপসংস্কৃতি ভাইরাসরা? “পৌরাণিক” শব্দটাকেই একটা অপশব্দে পরিনত করেছে তারা। অথচ বাস্তব তো এটাই যে, বেদ পুরাণ ইতিহাস সব কিছুই আমাদের পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ। একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। কাউকে অপমান করার কিছুই নেই। শাস্ত্র স্বীকৃত সবগ্রন্থই আমাদের মেনে চলা প্রয়োজন। ব্যবসার জন্যে কেবল “বেদ” রেখে অন্য সব গ্রন্থ বাদ দিতে হবে, এমন বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পাঠক বৃন্দগণ আমাদের সাধারণ সনাতনীদের বেদের পাশাপাশি  পুরাণকেও মান্যতা দিতে হবে। এবং শাস্ত্র অনুযায়ী পঞ্চবেদ বলে উল্লেখ করতে হবে। এবার আপনারাই বিবেচনা করুন। ধন্যবাদ


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করা দন্ডনীয় অপরাধ