হিন্দু’ শব্দের উৎপত্তি

শেয়ার করুন

<span;>হিন্দু’ শব্দের উৎপত্তি

<span;>প্রাচীন পারস্য – মানে, আভেস্তিয় সভ্যতা সংস্কৃতি – নাকি ‘স’-এর জায়গায় ‘হ’ বলতো, তাই ‘সিন্ধুর স খসে হ হয়ে হিন্দু হয়েছে’ – এরকম একটা গল্প বহুদিন শুনে আসছি।
<span;>হে জরাথুষ্ট্র!
<span;>আভেস্তায় ‘যাস্ন’ আর আপনার রচিত ‘গাথা’ পড়ে দেখছি ……
<span;>আপনি বেমালুম বলেছেন ‘আমেসা স্পেন্তা’ – তখন তো ‘স্পেন্তার’ ‘স’ খসিয়ে ‘হেন্তা’ করলেন না!
<span;>আপনি বেমালুম বলেছেন ‘আশা’ (ঋগ্বেদে ‘ঋত’), তখন তো ‘আহা’ বললেন না? যদিও ‘অসুর’কে বললেন ‘আহুর’!
<span;>আপনি বেমালুম বলেছেন ‘স্পেন্তা অর্মাইতি’ (ঋগ্বেদ ‘অমৃত’) – তখন তো ‘স্পেন্তার’ ‘স’ খসিয়ে ‘হেন্তা’ করলেন না!
<span;>আপনি বেমালুম বলেছেন ‘স্তউতা’ (ঋগ্বেদে ‘স্তোতা’ বা ‘স্তোত্র’) – তখন তো ‘স’ খসিয়ে ‘হউতা’ করলেন না!
<span;>আপনি বেমালুম বলেছেন ‘স্রয়েসতচ’ ( = ‘শ্রেষ্ঠ’) – তখন তো ‘স’ খসিয়ে ‘হয়েসতচ’ করলেন না!
<span;>অথচ, ‘অসুর’ যেমন ‘আহুর’ বললেন, তেমনি ‘বশিষ্ঠ’কে বলছেন ‘বহিষ্ঠ’ – তখন ‘স’ হয়ে গেলো ‘হ’।
<span;>দেখা যাচ্ছে, ‘স’ থেকে ‘হ’ হয়, যদি সে ‘স’ শব্দের মাঝে থাকে; কিন্তু শব্দের শুরুতে থাকলে তো তা হচ্ছে না!
<span;>তাহলে ‘সপ্ত সিন্ধু’ কি করে ও কেন ‘হপ্ত হিন্দু’ হল?
<span;>স্পেন্তা, স্তউতা, স্রয়েসতচ – সবার ব্যাপারে ‘স’ রইলো, আর ‘সপ্ত’ উচ্চারণ করতে পারলেন না? বললেন ‘হপ্ত’? আর ‘সিন্ধু’ উচ্চারণ করতে পারলেন না, বললেন ‘হেন্দু’?
<span;>হে জরাথুষ্ট্র!
<span;>যাই বলুন, ব্যাপারটা ঠিক মানা যাচ্ছে না।
<span;>আবার দারিউস কি আরও খোকা ছিল নাকি?
<span;>‘হেন্দু’ও বলতে পারলো না, শিলালিপিতে বলল ‘হিদু’?
<span;>আরে বাবা, ‘ন’-টা হাফিস হচ্ছে কোন লজিকে?
<span;>সিদ্ধান্ত –
<span;>১। সিন্ধু থেকে হিন্দু নয়
<span;>২। ‘সপ্ত সিন্ধু’ থেকে ‘হপ্ত হেন্দু’ নয় – সে যতই অমন শোনাক
<span;>৩। বশিষ্ঠ ঋষি ঋগ্বেদে বলেছেন ‘সরস্বতী সপ্তথী সিন্ধুমাতা’ (৭.৩৬.৬) – সরস্বতী সপ্তম ও সিন্ধুমাতা। তার মানে, ‘হপ্ত হেন্দু’ যদি ‘সিন্ধু’ থেকেই হয়, তাহলে ‘হপ্ত হেন্দু’ আসলে ‘সরস্বতী’, কারণ ‘সপ্ত সিন্ধু = সরস্বতী’
<span;>৪। ‘হপ্ত হেন্দু’ শব্দে কোন নদীর কথাই বলা হয়নি। ‘হপ্ত’ বা ‘সাত’ আসলে সূর্যের সাত ঘোড়া। ‘নদী’ নেই তা বলছি না; ‘নদী’ এখানে ‘রথের’ রূপক – সূর্যের রথের সাত ঘোড়ার রূপক। ঋগ্বেদে নদীকে প্রায়ই রথের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
<span;>কেন বলছি?
<span;>ছান্দোগ্য উপনিষদে, ঋষি বলছেন ‘উদ্যন্‌ হিংকার’ (২.১৪.১)। ‘উদ্যন’ অর্থাৎ ‘উদিত হচ্ছে এমন সূর্য’ – তা ‘হিং’। পারস্যের সাপেক্ষে ভারত হল পূর্বদিকে সেই সূর্য উদয়ের দেশ। সেই উদিত সূর্যকে ঋষির কল্পনায় টানে সাত অশ্বের রথ। ‘দ্যু’ বা আকাশ থেকে সেই ‘হিং’।
<span;>এই কারণেই, ‘সপ্ত সিন্ধু’ বা ‘হপ্ত হেন্দু’ – যার অর্থ, ‘সাতটি নদী-রথ বাহিত দ্যু-এর হিং বা আকাশে উদীয়মান সূর্য’।
<span;>ঋগ্বেদ সূক্ত ১০.১৮৯-য়ে, ঋষিকা সার্প রাজ্ঞী বলেছেন, পূর্বদিক সূর্যের মাতা আর দ্যু বা আকাশ সূর্যের পিতা।
<span;>অতএব, এই পর্যায়ে সিদ্ধান্ত –
<span;>হিন্দু – হিং + দ্যু
<span;>[দারিউসের ‘হিদু’, এই ‘হিং + দ্যু’-এর বেশী কাছাকাছি]
<span;>‘হিন্দু’ শব্দের উৎপত্তি ‘হিং + দ্যু’ অর্থাৎ ‘পূর্ব আকাশে উদিয়মান সূর্য’।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করা দন্ডনীয় অপরাধ