⚫ সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ….!
🔸 পূর্ব পক্ষেরদাবি:- কিছু অহিন্দু এবং দয়ানন্দ সরস্বতীজীর শিষ্যরা দাবি করেছে শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণের ১০/৮৪/১৩ নাম্বার শ্লোকে নাকি বলা হয়েছে যাঁরা শ্রীবিগ্রহাদির পূজার্চ্চনা করে তাঁরা গর্দভ! তাই সনাতন ধর্মে মূর্তি পূজা নিষিদ্ধ!
সত্যিই কি তাই চলুন আজ এই দাবীর খণ্ডন করা হবে।প্রথমে আমাদের যা জানা প্রয়োজন তা হলো -এইসব অবার্চীনেরা শাস্ত্রের মাঝখান থেকে একটা মাত্র শ্লোক কোট করে প্রমাণ করতে চায় সনাতন ধর্মে মূর্তি পূজা নিষেধ! এইসব বেদ ব্যবসায়ী ও অহিন্দুদের উদ্দেশ্যে বলি শাস্ত্রের মাঝখান থেকে টুকলিবাজি করার দিন আপনাদের শেষ হয়ে গেছে কারণ হিন্দুরা এখন শাস্ত্র গ্রন্থ পড়ে তাই এসব কপি বিদ্যা কিংবা শাস্ত্রের অর্ধাংশ প্রচার করলেই বিড়ম্বনায় পরবেন, তাই সাবধান! সুধী পাঠকবৃন্দ, শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণের ১০ম স্কন্ধের ৮৪তম অধ্যায়ের সার সংক্ষেপে তুলে ধরছি তাহলে সবার বুঝতে সুবিধা হবে। এই ৮৪তম অধ্যায়ে পরমেশ্বর ভগবান নানান মুনি ঋষি এবং গুরুদেবের মহিমা ব্যাক্ত করেছেন। মুনি ঋষি এবং গুরুদেবকে সম্মান না করলে মনুষ্যেরা যে সকল যজ্ঞ, পূর্জচ্চনা কিংবা তীর্থ ভ্রমণ করে সকলেই যে বৃথা তাই এই অধ্যায়ে খুব সহজ সরল ভাবেই তুলে ধরেছেন স্বয়ং বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ। তা আপনারা আলোচনার মাধ্যমেই পড়তে ও দেখতে পাবেন।
🔸 উত্তর পক্ষ:- হে পাখণ্ডীগণ! আপনাদের অপদাবীর খণ্ডন করার পূর্বে আপনারাদের উদ্দেশ্যে “শ্রীশ্রী গুরুগীতা”র একটি শ্লোক নিচে দেওয়া হলো
শ্রীশ্রী গুরুগীতা থেকে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় যে মুনি ঋষি গুরুদেবের আশ্রয় গ্রহণ কিংবা তাদের ভক্তি শ্রদ্ধা না করলে দেবতারাও প্রসন্ন হন না। সুতরাং শ্রীগুরু সেব্য, প্রণম্য ও আরাধ্য। এবারে অহিন্দু এবং অনার্য্যদের দেয়া রেফারেন্স শাস্ত্র প্রদর্শন সহ দেখে নেয়া যাক। শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ ১০/৮৪/১৩
শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ থেকে এই মঞ্চে উল্লেখযোগ্য শ্লোক, শাস্ত্র প্রদর্শন সহ নিচে উল্লেখিত প্রমাণ দেখুন।
সুধীপাঠকবৃন্দ অনুবাদে লক্ষ্য করুন এবং দেখুন শ্রীকৃষ্ণকে দর্শনার্থে সেই সভামঞ্চে ব্যাসদেব, নারদ, চ্যাবন, অসিত, বিশ্বামিত্র, গৌতম, অঙ্গীরা, অত্রি, মার্কেণ্ডেয় ইত্যাদি ইত্যাদি মুনিগণ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এবং মুনিগণ/ভগবদ তত্বজ্ঞ ব্যক্তিরা উপস্থিত হলে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাদের মহিমা প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন। শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ ১০/৮৪/৯,১০,১১ নাম্বার শ্লোক
পাঠকবৃন্দ লক্ষ্য করুন ভাগবত ১০/৮৪/৯,১০,১১ নাম্বার শ্লোকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মুনিগণের উদ্দেশ্যে সম্মান সূচক অনেক কথা বলেছেন। অর্থ্যাৎ আমরা পূর্বেই বলেছি মুনি ঋষি কিংবা গুরুদেবকে যদি সম্মান, ভক্তি শ্রদ্ধা করা না হয় তবে দেবতাও প্রসন্ন হন না। এজন্যই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মুনি ঋষি কিংবা গুরুদেবের সম্মানর্থে বলেছেন যারা প্রতিমাদিতে দেবার্চ্চনা করে কিন্তু গুরুদেব কিংবা মুনি ঋষিগণকে পূজা করেন না তাঁরাই গর্দভ। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মুনি ঋষি উদ্দেশ্যে আরো বলেছেন – শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ ১০/৮৪/১
পাঠকবৃন্দ দেখুন এই শ্লোকে ভগবান কৃষ্ণ স্পষ্ট করে বলেছেন অগ্নি, সূর্য্য চন্দ্র, বায়ু, বাক্য মন ইত্যাদির উপাসনা দ্বারাও পাপ নষ্ট হবে না কিন্তু ভেদজ্ঞানশূণ্য নিরহংকারী তত্বজ্ঞানিগণের মূহুর্তকাল সেবার দ্বারাই সেবকের পাপ নষ্ট হয়ে যায়। তাহলে পাঠকবৃন্দ চিন্তা করে দেখুন অপপ্রচারকারীরা কতটা অশিক্ষিত ও মিথ্যাবাদী তাঁরা পূর্বের শ্লোক গুলো(ভাগবত-১০/৮৪/১থেকে ১২পর্যন্ত) বিচার বিশ্লেষণ না করেই ভা. ১০/৮৪/১৩ নাম্বার শ্লোক কোট করে অপপ্রচার চালায়। অতত্রব সুধীজনেরা এইসব অহিন্দু ও মূর্তি পূজা বিরোধী অনার্য্যদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। শেষ করছি শ্বেতাশ্বতরোপনিষদের অন্তিম অধ্যায়ের অন্তিম মন্ত্র দিয়ে
যস্য দেবে পরা ভক্তির্যথা দেবে তথা গুরৌ। তস্যৈতে কথিতা হ্যর্থাঃ প্রকাশন্তে মহাত্মনঃ। প্রকাশন্তে মহাত্মনঃ।।
অনুবাদ:- যাঁর পরমদেব পরমেশ্বরে পরম ভক্তি তদনুরূপ পরম ভক্তি গুরুদেবেও রয়েছে সেই মহাত্মনের হৃদয়ে নিশ্চয়ই ব্রহ্মবিষয়ক জ্ঞান প্রকাশিত হয়।
আরো দেখুন:-
⚫ অনার্য কর্তৃক মূর্তি পূজা খণ্ডন নামক সিরিজের অপদাবীর নিরসন