শিব মহাপুরাণের মোহিনী অবতার ও শিবের কাহিনী অশ্লীল বলে মিথ্যাচারের জবাব

শেয়ার করুন

ভূমিকা:- বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ম্লেচ্ছ যবনেরা সনাতনীদের কাছে গিয়ে পুরাণ শাস্ত্রের বিভিন্ন কাহিনীর মধ্যে থাকা সংক্ষিপ্ত অপ্রীতিকর অংশকে তুলে ধরে সনাতনীদের প্রশ্ন করে, তাতে ৯৯ শতাংশ সনাতনী সেই অংশের সঠিক ব্যাখ্যা ও উত্তর না জানার ফলে, সংশয়ে পড়ে, কোনো উত্তর দিতে না পারলে নিজের ধর্মকে অশ্লীল ও তুচ্ছ ভেবে ধর্মের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, কেউ কেউ এই ম্লেচ্ছ যবনদের দলে ভিড়ে যায় অথবা নাস্তিক হয়ে যায়। এই সমস্ত কিছুর জন্য দায়ী হল — আর্যসমাজ । যার প্রতিষ্ঠাতা দয়ানন্দ সরস্বতী, যিনি নিজেও একজন পুরাণের নিন্দুক ছিলেন, মূর্তিপূজা বিরোধী, শুধুমাত্র নিরাকারবাদী, পুরাতন সকল সনাতনী আচার্যদের বিরোধী তথা নিন্দাকারী ছিলেন, ইনি ছল কপটতার দ্বারা সাধারণ মানুষ কে বিভ্রান্ত করতেন, ইনি ছিলেন থিয়োসোফিক্যাল সোসাইটি নামক খ্রিষ্টান সংগঠনের দালাল । আজকে  তার‌ই অনুসারী আর্যসমাজীরা দয়ানন্দ সরস্বতীর সেই ভণ্ডামীগুলিকে প্রচার করতে গিয়ে সনাতনীদের মন থেকে পুরাণ শাস্ত্রের প্রতি ঘৃণার উদয় ঘটাতে পুরাণের কিছুমাত্র খণ্ডিতাংশ দেখিয়ে সমগ্র পুরাণকে বেদ বিরুদ্ধ বলে প্রচার করছে, যার ফলে সনাতনীরাই এদের পাল্লায় পড়ে এদের চক্রান্তের শিকার হচ্ছে। এই আর্যসমাজীরা বাংলাদেশে এদের রমরমা ব্যবসা খুলেছে, যার নাম — বাংলাদেশ অগ্নিবীর। সেই সমস্ত অপপ্রচারের মধ্যে এদের একটি মিথ্যাচার হল — মহাদেব ও মোহিনীকে নিয়ে। তারা বলতে চাইছে যে, ভাগবত পুরাণ ও শিবপুরাণে এই কাহিনী রয়েছে সুতরাং এই কাহিনী অশ্লীলতায় পরিপূর্ণ, ঈশ্বর কখনোই এমন করতে পারেন না, ঈশ্বর সর্বদা কলঙ্কহীন। আর এই গুলো দেখেই আরেকটি গোষ্ঠী  সনাতন শাস্ত্র নিয়ে লাইভে এসে অপপ্রচার করে যাচ্ছে, সাধারণ সনাতনীদের কাছে কোনো উত্তর না থাকায় তারাও না বুঝেই তাদের দলে যোগ দেয়। পাঠকবৃন্দগণ এই মঞ্চে ম্লেচ্ছা অপসংস্কৃতি ভাইরাস গুলোর দাবী খণ্ডন সহ ভাগবত পুরাণ ও শিবমহাপুরাণের কাহিনীটি শাস্ত্র থেকে উল্লেখযোগ্য রয়েছে।

শাস্ত্র থেকে প্রমাণ সহ বিচার বিশ্লেষণ করা যাক

 

 

আমাদের জবাব

পরমেশ্বর শিবের সঙ্গে মোহিনী অবতারের বর্ণনা মূলত দুটি শাস্ত্র উল্লেখ পাই। একটি হচ্ছে ভাগবত মহাপুরাণ আরেকটি হচ্ছে শিবপুরাণ। ভাগবতপুরাণেই পরমেশ্বর শিব এবং মোহিনী অবতারের বিষাদ তথ্যপূর্ন রয়েছে। তাই অপপ্রচারের দল গুলো ভাগবত পুরাণে উল্লেখযোগ্য শিব ও মোহিনী অবতার নিয়েই সবচেয়ে বেশি অপপ্রচারের করে থাকে। এবং পরমেশ্বর শিবকে নিয়ে অশ্লীল,বিকৃত স্টিকার তৈরি করে বিভিন্ন মিডিয়ায় সাধারণ অজ্ঞ সনাতনীদের সামনে প্রকাশিত করে। তখন সাধারণ সনাতনীদের কাছে কোনো উত্তর না থাকায় তারা দ্বিধা পড়ে গিয়ে তাদের দলে যোগ দেয়। পাঠকগণ, ভাগবত মহাপুরাণে উল্লেখ পরমেশ্বর শিব ও মোহনী অবতার নিয়ে অপব্যাখার জবাব পূর্বেই দেওয়া হয়েছে।

 

  • ভাগবতপুরাণ উল্লেখ্য অংশটি

পাঠকবৃন্দ , ভাগবত মহাপুরাণে উল্লেখযোগ্য পরমেশ্বর শিব ও মোহনী অবতার নিয়ে যে অপপ্রচার করে থাকে‌। এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে গীতাপ্রেস- কৃত শাস্ত্র প্রদর্শন করে বিশ্লেষণ সহ চুলচেরা জবাব দেওয়া হয়েছে। শুধু নিচের লিংকে ক্লিক করে বিস্তারিত দেখুন। তবে পাঠক বৃন্দগণ একটি কথা স্মরণে রাখতে হবে। ধৈর্য হারালে হবে না। ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ লেখাটি অনুধাবন করুন। ক্লিক করুন এই লিংকে:- ভাগবত মহাপুরাণের মোহিনী অবতার ও শিবের কাহিনী অশ্লীল বলে মিথ্যাচারের জবাব

 

 

  • শিবপুরাণে উল্লেখ্য অংশটি

শিবপুরাণ উল্লেখযোগ্য, পরমেশ্বর শিব ও মোহনী অবতারের অংশটি শিব মহাপুরাণে খুব সংক্ষিপ্ত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই শিবপুরাণ উল্লেখযোগ্য অংশটি নিয়ে অপপ্রচারের দল গুলো তেমন একটা অপপ্রচার করে না। কিন্তু সুযোগে পেলে সাধারণ সনাতনীদের কাছে আবার কম করে না। এর মধ্যে আমরা জানি যে, গীতাপ্রেস-কৃত যে শিব পুরাণ প্রকাশিত করেছে তাহার নামই সংক্ষিপ্ত শিবপুরাণ। পাঠকগণ এবার বুঝুন কতটা সংক্ষিপ্ত ভাবে গীতাপ্রেস-কৃত সংক্ষিপ্ত শিবপুরাণ প্রকাশিত করেছে। তাও আবার গদ্য আকারে, নিচে গীতাপ্রেস-কৃত সংক্ষিপ্ত শিবপুরাণ উল্লেখযোগ্য অংশটি দেখুন

গীতাপ্রেস কৃত সংক্ষিপ্ত শিবপুরাণে খুব সংক্ষিপ্ত আকারে ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু আমরা শ্লোক সহ উপস্থাপন করে  চুলচেরা বিশ্লেষণ করবো।

 

এবার বিস্তারিত….

বিভিন্ন কল্পে এই এক‌ই ঘটনা বিভিন্ন ভাবে ঘটে বিভিন্ন উদ্দেশ্যের জন্যে ঘটে। তাই কল্প ভেদে শিবমহাপুরাণের এই মোহিনী প্রসঙ্গ মূলত পরমেশ্বর শিবের বীর্য থেকে হনুমান জীকে প্রকট করিয় ভগবান বিষ্ণুর অবতার শ্রীরামচন্দ্রের সঙ্গে লীলার উদ্যশে ভগবান শিবের অবতার হনুমানজীকে প্রকট করার উদ্দেশ্যে ঘটিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শ্রীরামচন্দ ছিলেন বিষ্ণুর অবতার আর এই দিকে হনুমানজী ছিলেন ভগবান শিবের অবতার। অপরদিকে এক ঈশ্বরের গুনাত্বক রূপ হচ্ছে (শিব,বিষ্ণু,রাম, হনুমান ) । ঈশ্বর দেবকার্যসিদ্ধির জন্যে জীবের হিতের জন্যে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে অবতার লীলা করে থাকে। তেমনি ভগবান বিষ্ণু মোহিনী অবতার ধারণ করে। সমুদ্র মন্থনের সময় অমৃত নিয়ে অসুর দেবতাদের মধ্যে যে কোলাহল সৃষ্টি হয়েছে। তা নিবারণ করার উদ্দেশ্যেই হলো ভগবান বিষ্ণুর মোহিনী অবতার। আর ভগবান বিষ্ণুর রাম অবতারকে সাহায্য করার লক্ষ্যেই হচ্ছে ভগবান শিবের হনুমান অবতার। তাই বিভিন্ন কল্পে এই এক‌ই ঘটনা বিভিন্ন ভাবে ঘটে বিভিন্ন উদ্দেশ্যের জন্যে।

 

एकस्मिन्समये शम्भुरद्भुतोतिकरः प्रभुः ।                      ददर्श मोहिनीरूपं विष्णोः स हि वसेद्गुणः ॥ ३।                অর্থ :-  একবার অত্যন্ত অদ্ভুত লীলাকারী গুনাত্মক ভগবান শম্ভু শ্রী বিষ্ণুর মোহিনী রূপকে দর্শন করেছিলেন।৩॥

পর্যবেক্ষণ:- উপরোক্ত শিবমহাপুরাণের ৩নং শ্লোক থেকে আমরা শব্দ প্রমাণ হিসেবে দেখতে পেলাম যে, ঈশ্বরের গুনযুক্ত রূপ শম্ভু অর্থাৎ কৈলাসপতি রুদ্রদেব। ঈশ্বররের আরেক ভগবান বিষ্ণু রূপী বিষ্ণুর অবতার মোহিনী রূপকে দর্শন করেছিলেন। ভাগবতের ৮/১২/ ১৩ তে স্পষ্ট বলেছেন যে ভগবান শিব কৌতুহলবশত এসেছেন বিষ্ণুর অবতার দর্শন করার জন্য। তিনি এটি সরাসরি দর্শন করবার জন্য দেবীকে নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। মহাদেবের যদি অশ্লীল কামলীলা করার‌ই ইচ্ছে থাকতো তবে কি তিনি তার পার্ষদ ও দেবী সতি কে সাথে আনতেন ? 

সুতরাং এখানে এইসময়ে কামের গন্ধ‌ও এখন‌ নেই

_________________________________________

 

चक्रे स्वं क्षुभितं शम्भुः कामबाणहतो यथा ।                    स्वं वीर्यं पातयामास रामकार्यार्थमीश्वरः ॥ ४।           অর্থ:- কামবানে আহত হওয়া ব্যক্তির মত ভগবান শম্ভু নিজেকে বিক্ষুব্ধ করে নিলেন, ঈশ্বর শ্রী রামের কার্যকে সম্পাদন করার জন্য নিজের বীর্য (ঘর্মজল)কে উৎসর্গ পতিত করলেন ॥৪

পর্যবেক্ষণ:- খেয়াল করুন ! কামবানে আহত ব্যক্তির মতো অর্থাৎ ভগবান শিবের মতো যোগপরায়ণ মহাত্মা কখনোই কামাগ্র হতেই পারেন না। তবুও ভগবান শম্ভু নিজের ইচ্ছায় সেই মোহিনীর মায়ায় মোহাচ্ছন্নকারী রূপকে দেখে বিষ্ণুর অবতার শ্রীরাম চন্দ্রের  কার্যসিদ্ধির জন্যে নিজের স্বইচ্ছায় নিজের বীর্য অর্থাৎ দেহ থেকে ঘর্মজল কে উৎসর্গ পতিত করলেন। এই বীর্য শব্দটি দেখে-  ম্লেচ্ছারা ভেবে বসেছে, সাধারণ মনুষ্যের শুক্র বীর্যের মতোই মহাদেবেরও বীর্য-শুক্র বের হয়েছে। প্রানী তথা মনুষ্যের শুক্র আর দৈবী শুক্র যে এক নয়। এটা ম্লেচ্ছারা বুঝতে চায় না। এই প্রসঙ্গে “বীর্য উৎসর্গ” বলতে যা বোঝানো হয়েছে তা মূলত “ঘর্মজল পতিত হওয়া” কে বোঝানো হয়েছে। যারা অপপ্রচার করে তাদের মান্য দয়ানন্দের সত্যার্থ প্রকাশ থেকেই প্রমাণ করা যাক

পাঠকবৃন্দ! দেখুন – রেত বা বীর্য শব্দের অর্থ শুধু শুক্র নয় বরং জলও হয়। সুতরাং, মোহিনীর মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে মহাদেবের ঘাম পতিত হয়েছিল । দৈবী বিষয়ের সাথে মনুষ্যের বিষয়কে এক দৃষ্টিকোণে বিচার করা অনুচিত। এ কথা আমাদের পুরাণ শাস্ত্র নিজেই নির্দেশ দিয়েছে। যেমন মৎসপুরাণ/অধ্যায় নং ৪/ শ্লোক ৫-৬ বলেছেন যে, যেমন ভাবে সাপের মার্গ সাপ তথা পাখিদের আকাশে চলার মার্গ শুধু পাখিরাই জানতে পারে, ঠিক তেমন ভাবেই দিব্য জীবের(দেবতার) অচিন্ত্য মার্গের গতিপ্রকৃতি দিব্যজীব অর্থাৎ দেবতারাই বোধগম্য করতে পারে, সে বিষয়ে সাধারণ মানুষ তা বোধগম্য করতে পারে না ॥৫ হে রাজেন্দ্র! কেননা, দেবতাদের কার্য বা অকার্য, শুভ বা অশুভ ফল প্রদানকারী হয় না। এই কারণে, সেই দেবতাদের বিষয়ে মনুষ্য মস্তিষ্ক দিয়ে বিচার করা শ্রেয়কর নয় ৷

পৌরাণিক মান্যতা অনুযায়ী পুরাণের প্রত্যেকটি বিষয়ের কোন প্রসঙ্গের মধ্যে কি ভাবার্থ রয়েছে তা পৌরাণিকরাই ব্যাখ্যা করতে পারে, বাইরে থেকে কেউ এসে পুরাণের একটি শব্দের অর্থ নিজের ইচ্ছে মতো বদলে কটু দৃষ্টিকোণের মাধ্যমে বিচার করলেই তা যে পুরাণের সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে না, বরং পুরাণের বিষয়গুলি ধৈর্য্য পূর্বক সঠিক গুরুর কাছে গিয়ে এর মীমাংসা ও ব্যাখ্যা জানা উচিত । 

 

মহাদেবের তপস্যা করে সাবর্ণি মুনি মহাদেবের কৃপায় পুরাণ বিষয়ের বিতর্কিত স্থানকে মীমাংসা করার জন্য রচনা করেছিলেন – পৌরাণিক সংহিতা নামক স্বতন্ত্র শৈবশাস্ত্র (তথ্যসূত্র : কূর্মপুরাণ/পূর্বভাগ/অধ্যায় ২৫/শ্লোক নং ৪১-৪২)। সেই পৌরাণিক সংহিতার ২য় অধ্যায়ের অন্তর্গত ২নং শ্লোকে, ৪নং শ্লোকে ও ৬নং থেকে ১১নং শ্লোকে বলা হয়েছে — 

देवप्राणिनां सति शुक्रः समानः ॥२                                रेतः वा जलं वा स्वेदविन्दुः वा दैवशक्तिं ।                      तेज वा देवंशं वा वीर्यं ज्ञायते ॥४।                      प्राचीनकाले अन्धकासुरः महादेवस्य स्वेदबिन्दुतः।            इति जातः सः स्वेदबिन्दुः रेत स वीर्यम् इति उच्यते ॥६।      भौ तिकलोकस्य जीवाः कामात् एव स्खलनं कुर्वन्ति ।    परन्तु देवाःअस्मिन्धनधामे केनचित् महात्मा वा शुभशक्तिं॥ ७ वा अवतारयितुं जगतः कृते दिव्यं वीर्यं स्वभागेभ्यः। दिव्यतारूपेण पृथक् कुर्वन्ति वा क्षिपन्ति वा ॥८।              यदि सः लीलायाः तुलनां कामोद्दीपकक्रियातः ।            मुक्तेन वीर्येण सह करोति तर्हि सः अवश्यमेव ।      योनिभ्रमणं म्लेच्छाः इति प्रसिद्धः भविष्यति ॥९।             यतो हि दिव्यवीर्यस्य मानववीर्यस्य च मध्ये ।        आकाशस्य पृथिव्याः च भेदः भवति यथा दूरतः ।        आकाशं पृथिवीं च दृष्ट्वा विलीयन्ते इव भासते ॥१०।      परन्तु वास्तविकार्थे तस्य भ्रमः एव मनः यथा ।              दिव्यं वीर्यं मानववीर्यं च यद्यपि श्रवणेन समानं ।           तथापि ते सर्वथा भिन्नाः स्वभावाः न संशयः। ॥११

অর্থ :- বীর্য কি দেবতা ও জীবের ক্ষেত্রে সমান?২!  রেত , জল , স্বেদবিন্দু(ঘাম বিন্দু), দৈবশক্তি, তেজ বা দৈবাংশকেও বীর্য বলে জানবে॥৪ প্রাচীনকালে মহাদেবের স্বেদবিন্দু থেকে অন্ধকাসুর নামের এক দৈত্য উৎপন্ন হয়েছিল, এই স্বেদবিন্দুই রেতস্বরূপ বীর্য বলে জানবে ॥৬ জড় জগতের জীবগণ কেবলমাত্র কামনার বশবর্তী হয়েই বীর্যপাত করে , কিন্তু দেবতাগণ জগতের হিতার্থে কোনো মহাত্মা বা শুভশক্তিকে এই ধরাধামে অবতীর্ণ করানোর নিমিত্তে তাদের অংশ থেকে উদ্ভূত দেবাংশস্বরূপ বীর্যকে লীলাবশত তাহাদের দিব্যশরীর থেকে পৃথক করেন বা নিক্ষেপ করেন॥৭-৮ এহেন লীলাকে যে কামউদ্দিপক ক্রিয়া থেকে নির্গত বীর্যের সঙ্গে তুলনা করেন তাকে নিশ্চয় মনুষ্য যোনিতে বিচরণকারী ম্লেচ্ছস্বরূপ বলে জানবে॥৯ কারণ , দৈববীর্য ও মনুষ্য বীর্যের মধ্যে আকাশ ও ভূমির সমান পার্থক্য বর্তমান, যেমন আকাশ ও ভূমিকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় তারা মিশে আছে॥১০ কিন্তু প্রকৃত অর্থে তা মনের ভ্রম, তেমনই দৈববীর্য আর মনুষ্যবীর্য শ্রবণে এক হলেও টা সম্পূর্ন ভিন্ন প্রকৃতির । এতে কোনো সন্দেহ নেই॥১১

 

🔍পর্যবেক্ষন — দেখুন দেখুন পাঠকবৃন্দ, বীর্য কথার অর্থ ঘর্ম জল কে বোঝানো হয়েছে, এমনকি ঘাম থেকে অন্ধকাসুর জন্মেছিল বলে শব্দ প্রমাণ রয়েছে, সুতরাং ঘামের জলবিন্দুকেই বীর্য বা রেত বলা হয়। যারা এটি বুঝতে না পেরে দৈববীর্যকে সাধারণ মানুষের রেত-বীর্যের মতো মনে করে তাদের ম্লেচ্ছ বলে চিহ্নিত করেছেন সাবর্ণী মুনি। কারণ, দেবতাদের বীর্য আর মানুষ তথা প্রানীর বীর্য বলতে ভিন্ন অর্থ বোঝায় । দয়ানন্দ সরস্বতী‌ একটা আস্ত গর্দভ ছিল আর তার নিয়োগী চ্যালা আর্যসমাজীরা হচ্ছে তার চেয়েও দশগুণ বরাহ শাবক, থিয়োসোফিক্যাল সোসাইটি নামক খ্রীষ্টান দের দালাল।

 

[ভালো করে লক্ষ্য করে দেখুন, উপরোক্ত শ্লোকে কি কোথাও মহাদেবের যৌনাঙ্গ/শিশ্ন থেকে রেত পতিত হবার কথা বলা হয়েছে ? না…বলা হয়নি]

 

তাহলে কিসের ভিত্তিতে আর্যসমাজী তথা অসনাতনীরা মহাদেবের রেত পতিত হ‌ওয়াকে অশ্লীল বলে মিথ্যাচার করেছেন ? অনুমানের ভিত্তিতে ? কিন্তু আপনাদের অনুমান‌ও ভুল,  কারণ, রেত কথার অর্থ এক্ষেত্রে ঘামের জল । সাধারণ ঘামের জল নয়, দৈবী এটি। প্রমাণ করা হয়েছে সেটি উপরেই।অবশ্য দয়ানন্দীরা তো নিয়োগী ভণ্ড। তাদের তো সবসময় চোখে অশ্লীল ই ধরা পড়ে, কেননা দয়ানন্দ সরস্বতীও ছিল নন্নীজানবল্লভ, রমাবাইয়ের উপপতি। কিন্তু দয়ানন্দের ভুলগুলো আর তাদের চোখে ধরা পড়ে না, দয়ানন্দ সরস্বতীর রচিত সত্যার্থ প্রকাশের একাদশ সমুল্লাসে শিবপুরাণ সমীক্ষা নামক মিথ্যাচারের আমরা শৈবরা আপাদমস্তক খণ্ডন করে দয়ানন্দ সরস্বতীকে মূর্খ, অর্ধসত্য, চতুর, মিথ্যাবাদী ম্লেচ্ছ প্রমাণ করেছি। সেসবের জবাব কোথায় ? জবাব না দিয়ে পুরাণ নিয়ে দিনরাত মিথ্যাচার করাই আর্যসমাজীদের কাজ । যেমন গুরু তার তেমন চ্যালা । আর অসনাতনীদের আর কাজ কি দিনরাত নারী ভোগ‌ই যাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্যে তারা তো সব জায়গাতেই যৌনতা খুঁজে পাবে এটাই স্বাভাবিক।যাই হোক, এবার পরবর্তীত শ্লোকগুলি দেখা যাক।

_________________________________________

 

तद्वीर्यं स्थापयामासुः पत्रे सप्तर्षयश्च ते।                      प्रेरिता मनसा तेन रामकार्यार्थमादरात् ॥५                   অর্থ:- সপ্তর্ষিগণ সেই রুদ্রের বীর্য(ঘামের জলবিন্দু)কে ভগবান রামের কার্য সফল করার উদ্দেশ্যের জন্য আদরপূর্বক পাতাতে তা স্থাপন করে রাখলেন ॥৫

পর্যবেক্ষন:- ভগবান শিবের ইচ্ছাতে ঘর্ম জলবিন্দু পতিত হওয়ার পর সাত জন ঋষি মিলে ভগবান শিবের ঘর্মজলকে ভগবান রামের কার্য সফল করার জন্যে আদরপূর্বক একটি পাতাতে স্থাপন করে রাখলেন। বীর্যকে পাতায় ধারণ করতে দেখে আর্যসমাজীরা বলতে চাইছে যে, এই বীর্য নাকি মনুষ্যের মতোই শুক্রবীর্য, এই বীর্যকে তেজ বলে ব্যাখ্যা করাও নাকি যুক্তিযুক্ত নয়, কারণ তেজ কখনোই পাতায় ধারণ করা হয় না। এরকম দাবী করা বাংলাদেশ অগ্নিবীর নামক ম্লেচ্ছ আর্যসমাজী দের উদ্দেশ্যে বলছি, ভগবান শিবের এই বীর্য মূলত ঘর্মজল, তাই তো পাতাতে স্থাপন করার কথা উল্লেখ আছে। আর সপ্তর্ষিরা মিলে ভগবান শিবের কৃপায় সে ত্যাজকে পাতাতে স্থাপন করলেন। তাই তা পাতাতে স্থাপন করার বিষয়ের সাথেই যুক্তিযুক্ত। শিবের এই বীর্যকে তেজ‌ও বলা যায় কেননা এটি মহেশ্বরের শক্তিবিশেষ ।_________________________________________

 

 

तैर्गौतमसुतायां तद्वीर्यं शम्भोर्महर्षिभिः ।                  कर्णद्वारा तथाञ्जन्यां रामकार्यार्थमाहितम् ॥ ६।        অর্থ:- তারপর সেই মহর্ষিগণেরা ভগবান রুদ্রের সেই বীর্যকে শ্রী রামচন্দ্রের কার্যকে সফল করার জন্য গৌতম ঋষির কন্যা অঞ্জনীর কানের মাধ্যমে স্থাপন করে দিলেন৬

পর্যবেক্ষণ:- দেখুন দেখুন পাঠকবৃন্দগণ! এখানেও শব্দচয়নে মহর্ষিগণদের কথা উল্লেখ রয়েছে। ভগবান শিবের কৃপাতেই এই মহর্ষিগণরা, তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্রীরামচন্দ্রের কাজকে সহযোগিতা কররা লক্ষ্যে গৌতম ঋষির কন্যা অঞ্জনীর কানে ওই ঘর্মজলবিন্দু স্থাপন করলেন। আমরা সকলেই অবগত আছি অঞ্জনীর পুত্রই হনুমানজী। আর এই হনুমানজীই শিবের অবতার। আর ভগবান শিব নিজের ঘর্মজল থেকে নিজেই প্রকটিত হয়ে ঋষিগনের পরিকল্পনা রক্ষা করলেন  এবং বিষ্ণুর অবতার শ্রীরামচন্দ্রের কাজে সহযোগিতা করেছেন। _________________________________________

 

 

ततश्च समये तस्माद्धनूमानिति नामभाक् ।               शम्भुर्जज्ञे कपितनुर्महाबलपराक्रमः॥७।                  অর্থ:-উপযুক্ত সময় উপস্থিত হলে সেই শম্ভুর বীর্য মহান বল ও পরাক্রমশালী আর বানর শরীর সম্পন্ন হয়ে হনুমান নামে প্রকট হন ॥৭

পর্যবেক্ষণ:- অপসংস্কৃতির ভাইরাস গুলোর চৌখে কি সেই শম্ভুর বীর্য মহান বল ও পরাক্রমশালী আর বানর শরীর সম্পন্ন হয়ে হনুমান নামে প্রকট হন এই শ্লোকটি নজরে পরে নি।  দেখুন পাঠকবৃন্দগণ পূর্বে বলা হয়েছে রামকার্য সিদ্ধির জন্যে তিনি নিজেই নিজের ঘর্মজল উৎসর্গ করেছেন। আর এই শ্লোকে স্পষ্ট বলেছেন যে , সে ঘর্মজলবিন্দু থেকে তিনি হনুমান রূপে প্রকটিত হলেন।  এবার রামায়ণে নজর দিয়ে দেখা যাউক। রামায়ন ৪/৬৬/১৮-২০ উল্লেখ রয়েছে পবনদেব অঞ্জনার পাতিব্রত্য নষ্ট না করিয়া শুধু স্পর্শ দ্বারাই এক মহাবলশালী পুত্র উৎপাদন করেন। এক পর্বতগুহায় অঞ্জনার কোলে পবনতনয় হনুমানের আর্বিভাব হয়।

মহাদেবের সেই নির্গত ঘর্মজলবিন্দু হনুমানের মাতা অঞ্জলীর কর্ণে সপ্তর্ষিরা মিলে স্থাপন করলেন।  আর এই দিকে পবনদেব অঞ্জনার স্পর্শ করা মাত্রই ভগবান শিব হনুমান রূপে প্রকটিত হয়েই।  ভগবান বিষ্ণুর অবতার রামচন্দ্রের সাথে লীলা কার্য করতে লাগলেন।

তাই পূর্বেই বলেছিলাম, কিন্তু পাঠকের সুবিধার্থে আবার শ্লোকসহ তোলে ধরছি। যথা ভুজঙ্গাঃ সর্পাণামাকাশং বিশ্বপক্ষিণাম্ । বিদন্তি মার্গং দিব্যানাং দিব্যা এব ন মানবাঃ ॥৫ কার্যাকার্যে ন দেবানাং শুভাশুভফলপ্রদে । যস্মাত্তস্মান্ন রাজেন্দ্র তদ্বিচারো নৃণাং শুভঃ ॥৬ [তথ্যসূত্র : মৎসপুরাণ/অধ্যায় নং ৪/৫-৬] অর্থ :- যেমন ভাবে সাপের মার্গ সাপ তথা পাখিদের আকাশে চলার মার্গ শুধু পাখিরাই জানতে পারে, ঠিক তেমন ভাবেই দিব্য জীবের(দেবতার) অচিন্ত্য মার্গের গতিপ্রকৃতি দিব্যজীব অর্থাৎ দেবতারাই বোধগম্য করতে পারে, সে বিষয়ে সাধারণ মানুষ তা বোধগম্য করতে পারে না॥৫ হে রাজেন্দ্র ! কেননা, দেবতাদের কার্য বা অকার্য , শুভ বা অশুভ ফল প্রদানকারী হয় না। এই কারণে, সেই দেবতাদের বিষয়ে মনুষ্য মস্তিষ্ক দিয়ে বিচার করা শ্রেয়কর নয়॥৬

 

উপসংহার:-

ঈশ্বররের গুণাত্বক রূপ হচ্ছে ভগবান শিব ও ভগবান বিষ্ণু। দেবকার্যসিদ্ধির জন্যে ও জীবের হিতের জন্যে তারা বিভিন্ন অবতার ধারণ করেন। যেমন উপরে উল্লেখিত জ্যান্ত উদাহরণ ভগবান শিব ভগবান বিষ্ণুর অবতার শ্রীরামচন্দ্রকে কার্যসিদ্ধির জন্যে ভগবান শিব হনুমান রূপে অবতার গ্রহণ করেছেন। ভগবান শিবের বীর্য বলতে ঘর্মজলবিন্দুকে বুঝিয়েছে। আর সে ঘর্মজলবিন্দুই ভগবান শিবের কৃপাতেই মহর্ষিরা অঞ্জনার কর্ণে স্থাপন করলেন। সেখান থেকেই ভগবান শিব প্রকট হয়ে হনুমান রূপে লীলা কার্য সম্পাদন করেছেন।

_________________________________________

 

 

  • আরো জানুন:-

শ্রুতি ও স্মৃতি কি পুরাণকে মান্যতাহীন বলেছে?

 

ব্রহ্মা জঘন থেকে অসুর সৃষ্টি করলেন। সে অসুর ব্রহ্মাকেই ধর্ষণ করতে আসলেন এমন আস্ফালনের জবাব


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করা দন্ডনীয় অপরাধ