ভাগবত মহাপুরাণের মোহিনী অবতার ও শিবের কাহিনী অশ্লীল বলে মিথ্যাচারের জবাব

শেয়ার করুন

ভূমিকা:- বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ম্লেচ্ছ যবনেরা সনাতনীদের কাছে গিয়ে পুরাণ শাস্ত্রের বিভিন্ন কাহিনীর মধ্যে থাকা সংক্ষিপ্ত অপ্রীতিকর অংশকে তুলে ধরে সনাতনীদের প্রশ্ন করে, তাতে ৯৯ শতাংশ সনাতনী সেই অংশের সঠিক ব্যাখ্যা ও উত্তর না জানার ফলে, সংশয়ে পড়ে, কোনো উত্তর দিতে না পারলে নিজের ধর্মকে অশ্লীল ও তুচ্ছ ভেবে ধর্মের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, কেউ কেউ এই ম্লেচ্ছ যবনদের দলে ভিড়ে যায় অথবা নাস্তিক হয়ে যায়। এই সমস্ত কিছুর জন্য দায়ী হল — আর্যসমাজ । যার প্রতিষ্ঠাতা দয়ানন্দ সরস্বতী, যিনি নিজেও একজন পুরাণের নিন্দুক ছিলেন, মূর্তিপূজা বিরোধী, শুধুমাত্র নিরাকারবাদী, পুরাতন সকল সনাতনী আচার্যদের বিরোধী তথা নিন্দাকারী ছিলেন, ইনি ছল কপটতার দ্বারা সাধারণ মানুষ কে বিভ্রান্ত করতেন, ইনি ছিলেন থিয়োসোফিক্যাল সোসাইটি নামক খ্রিষ্টান সংগঠনের দালাল । আজকে  তার‌ই অনুসারী আর্যসমাজীরা দয়ানন্দ সরস্বতীর সেই ভণ্ডামীগুলিকে প্রচার করতে গিয়ে সনাতনীদের মন থেকে পুরাণ শাস্ত্রের প্রতি ঘৃণার উদয় ঘটাতে পুরাণের কিছুমাত্র খণ্ডিতাংশ দেখিয়ে সমগ্র পুরাণকে বেদ বিরুদ্ধ বলে প্রচার করছে, যার ফলে সনাতনীরাই এদের পাল্লায় পড়ে এদের চক্রান্তের শিকার হচ্ছে। এই আর্যসমাজীরা বাংলাদেশে এদের রমরমা ব্যবসা খুলেছে, যার নাম — বাংলাদেশ অগ্নিবীর। সেই সমস্ত অপপ্রচারের মধ্যে এদের একটি মিথ্যাচার হল — মহাদেব ও মোহিনীকে নিয়ে। তারা বলতে চাইছে যে, ভাগবত পুরাণ ও শিবপুরাণে এই কাহিনী রয়েছে সুতরাং এই কাহিনী অশ্লীলতায় পরিপূর্ণ, ঈশ্বর কখনোই এমন করতে পারেন না, ঈশ্বর সর্বদা কলঙ্কহীন। আর এই গুলো দেখেই আরেকটি গোষ্ঠী  সনাতন শাস্ত্র নিয়ে লাইভে এসে অপপ্রচার করে যাচ্ছে, সাধারণ সনাতনীদের কাছে কোনো উত্তর না থাকায় তারাও না বুঝেই তাদের দলে যোগ দেয়। পাঠকবৃন্দগণ এই মঞ্চে ম্লেচ্ছা অপসংস্কৃতি ভাইরাস গুলোর দাবী খণ্ডন সহ ভাগবত পুরাণ ও শিবমহাপুরাণের কাহিনীটি শাস্ত্র থেকে উল্লেখযোগ্য রয়েছে।

শাস্ত্র থেকে প্রমাণ সহ বিচার বিশ্লেষণ করা যাক

 

 

 

ভাইরাস গুলোর অপপ্রচার

সাধারণ সনাতনীদের হেয় করার জন্যে  তারা ভগবান শিবকে নিয়ে অস্বাভাবিক ভাবে স্টিকার তৈরি করে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার করে থাকে। সেখানে ভগবান শিবকে তারা কামুকভাবেই উপস্থাপন করে থাকে। ভগবান শিবকে একবারে নিম্ন , অশ্লীল বলে উল্লেখ করে থাকে।  পাঠকবৃন্দগণ, অপপ্রচারের ভাইরাস গুলো সম্পূর্ণ কাহিনী অনুপস্থিত রেখে মাঝখান থেকে শ্লোক তোলে এনে মূলত অপপ্রচারের করে থাকে। হে পাঠক বৃন্দগণ, সময় নিয়ে  ধৈর্য সহকারে সম্পূর্ণ লিখাটি পড়ুন এবং শ্লোক সহ বিশ্লেষণ পড়ুন। নিচে অপপ্রচারের মন্তব্য দেখুন

 

  • আর্য সমাজকৃত অপপ্রচার

দয়ানন্দ পুরাণকে অমান্য করেছেন। এবং সে সাথে সাথে তার অনুসারীরা পুরাণ শাস্ত্র নিয়ে অপপ্রচার করে যাচ্ছেন।এই চ্যালা কৃত আর্য সমাজীরা সর্বদা পুরাণ নিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন পুরাণ থেকে খণ্ডাংশ শ্লোক তোলে এনে অপপ্রচারের করে যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম অপপ্রচার হলো ভগবান বিষ্ণুর মোহিনী অবতার ও ভগবান শিবকে নিয়ে।

বাংলাদেশ অগ্নিবীরকৃত অপপ্রচার

 

  • অসনাতনীদের অপপ্রচার

অন্য ধর্মাবলম্বীরা কখনোই সনাতনীদের শাস্ত্রসমূহ অধ্যায়ন করতে আসে না। মূলত আর্যসমাজের পুরাণ নিয়ে অপপ্রচার গুলো দেখেই অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা তাদের মতো অপপ্রচারের করে যাচ্ছে। আর মধ্যে খানে সাধারণ সনাতনী এই অপপ্রচারের শিকার হতে হচ্ছে। এবং কেহ কেহ না বুঝেই ধর্ম ত্যাগ করে দিচ্ছে।

অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অপপ্রচার

 

 

আমাদের জবাব 

ভাগবত মহাপুরাণের ৮ম স্কন্ধের ১২নং অধ্যায়ের অন্তর্গত মোহিনীরূপ দর্শনে রুদ্রদেবের মোহপ্রাপ্তি কাহিনীর শ্লোক সহ শাস্ত্র প্রদর্শন গীতাপ্রেস–কৃত অনূদিত অনুবাদসহ অপপ্রচারের জবাব

ভাগবত মহাপুরাণ ৮ম স্কন্ধ ১২নং অধ্যায়

 

অবতারা ময়া দৃষ্টা রমমাণস্য তে গুণৈঃ।                সোহহং তদ্ দ্রষ্টুমিচ্ছামি যৎ তে যোষি পুৰ্বতম্১২।   অর্থ — হে ভগবন ! আপনি যখন গুণাদিকে (অর্থাৎ মায়াকে) স্বীকার করে লীলা করার জন্য অবতার রূপে জন্মগ্রহণ করেন তখন আমি আপনার সেই রূপ দর্শন করেছি। এখন আমি আপনার সেই অবতার রূপ দর্শন করতে ইচ্ছুক, যাতে আপনি নারীরূপ ধারণ করেছিলেন১২

🔺বিশ্লেষণ — দেখুন পাঠকগণ ! এখানে ভগবান রুদ্রদেব সর্ব প্রথম জানিয়েছেন যে বিষ্ণুর প্রত্যেক অবতার কে মহেশ্বর দর্শন করে আনন্দ লাভ করেন, সেই হিসেবে বিষ্ণুর এই অবতার অর্থাৎ মোহিনী অবতার দর্শন করার জন্য বৈকুন্ঠে উপস্থিত হন । তাই এখানে এটা বলা সম্পূর্ণই ভুল যে মহেশ্বর মোহিনীর সাথে সমাগম করার জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন । এসব উদ্ভট কথা আর্যসমাজী তথা অপসংস্কৃতি ভাইরাস গুলোর অসংযত যৌন উত্তেজনার চিন্তার থেকে উদ্ভব হয়।

 

যেন সম্মোহিতা দৈত্যাঃ পায়িতাশ্চামৃতং সুরাঃ।        তদ্ দিদৃক্ষব আয়াতাঃ পরং কৌতূহলং হি নঃ১৩।          অর্থ — যে রূপ দ্বারা আপনি দৈত্যদের মোহিত করে দেবতাদের অমৃত পান করিয়েছেন আপনার সেই রূপ দর্শন করার জন্যে আমরা এসেছি। সেই রূপ দর্শনের জন্য আমাদের কৌতূহল হচ্ছে ৷৷ ১৩ ৷৷

🔺বিশ্লেষণ — ভগবান শিব কৌতুহলবশত এসেছেন ভগবান বিষ্ণুর অবতার দর্শন করার জন্য। তিনি এটি সরাসরি দর্শন করবার জন্য দেবীকে নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। মহাদেবের যদি অশ্লীল কামলীলা করার‌ই ইচ্ছে থাকতো তবে কি তিনি তার পার্ষদ ও দেবী সতি কে সাথে আনতেন ? 

সুতরাং:- এখানে কামের এবং অশ্লীলতার গন্ধ‌ও নেই

 

শ্রীশুক উবাচ ‌                                      এবমভ্যর্থিতো বিষ্ণুর্ভগবান শূলপাণিনা।                  প্রহস্য ভাবগম্ভীরং গিরিশং প্রভাভাষত ॥১৪।          অর্থ — শ্রীশুকদেব বললেন— যখন ভগবান শংকর বিষ্ণু- ভগবানকে এইভাবে প্রার্থনা জানালেন তখন ভগবান বিষ্ণু হেসে গম্ভীরভাবে ভগবান শংকরকে বললেন। ১৪ ॥

শ্রীভগবানুবাচ                                          কৌতুহলায় দৈত্যানাং বোধিয়েখো ময়া কৃতঃ পশ্যতা সুরকার্যাণি গতে পীযূষভাজনে ॥১৫।                   অর্থ — শ্রীবিষ্ণু ভগবান বললেন –হে শংকর সেই সময়ে অমৃত কুণ্ড দৈতাদের দ্বারা অপহৃত হয়েছিল। অতএব দেবতাদের কার্যসিদ্ধির জন্য এবং দৈতদের মন সম্মোহিত করে অন্য দিকে আকর্ষণ করার জন্য আমি ওই নারীরূপ ধারণ করেছিলাম। ১৫ ॥ 

🔺বিশ্লেষণ — দেখুন পাঠকবৃন্দ ! এখানে ভগবান বিষ্ণু স্পষ্ট করেই বলেছেন যে, ভগবান বিষ্ণু মোহিনী রূপ ধারণ করেছিলেন মনকে সম্মোহিত অর্থাৎ কামপূর্ণ করে তোলার জন্য, যাতে দৈত্যরা অমৃত খাবার কথা ভুলে মোহিনীকে পাবার জন্য ছুটে গিয়ে অমৃত খাবার সুযোগ হাতছাড়া করে ফেলে । সুতরাং ভগবান বিষ্ণু মোহিনী রূপ ধারণ করেছেন একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের জন্য। দেবতাদের কার্যসিদ্ধির জন্যে দৈত্যদের মন অমৃত থেকে অন্য দিকে আকর্ষন করার জন্যে। চলুন পরবর্তী শ্লোক দেখা যাক।

 

তবেংহঃ দর্শয়িষ্যামি দিদুক্ষ সুরসত্তম।                  কামিনাং বহু মন্তব্যং সঙ্কল্পপ্রভবোদয়ম্॥১৬।            অর্থ — হে দেবশিরোমণি ! আপনি যখন দেখতে ইচ্ছুক তখন আপনাকে সেইরূপ আমি দর্শন করাবো। কিন্তু এই রূপ তো কামুকদের প্রিয়, কারণ এই রূপ কামকেই উদ্দীপিত করে। ১৬ ॥

🔺বিশ্লেষণ — খেয়াল করুন ! ভগবান বিষ্ণু মোহিনী রূপের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বললেন যে, এই মোহিনী রূপটি কামুক ব্যক্তিদের জন্য‌ পছন্দের রূপ, তার কথায় ইঙ্গিত রয়েছে যে, রুদ্রদেবের মতো যোগপরায়ণ মহাত্মার জন্য এইরূপ দর্শন উপযুক্ত নয়। কেননা, এই রূপ দর্শন মাত্র‌ই মনে কাম ক্রিয়া করবার অতি ভয়ংকর তথা প্রবল ইচ্ছা জেগে ওঠে । পাঠকবৃন্দ বুঝে দেখুন, ভগবান বিষ্ণু আগেই বলে দিয়েছেন যে এই রূপটি মোহন করে কামনা জাগানোর উদ্দেশ্যেই ধারণ করা হয়, তাহলে এর দ্বারা ভগবান শিব মোহিত হলে তাতে আশ্চর্যের কি আছে ?

 

শ্রীশুক উবাচ                                                    ইতি জুবাণো ভগবাংস্তত্রৈবান্তরধীয়ত । সর্বতশ্চারয়ংশ্চক্ষুর্ভব আস্তে সহোময়া ৷৷ ১৭।        অর্থ — শ্রীশুকদেব বললেন, এই কথা বলতে বলতেই ভগবান বিষ্ণু অন্তর্হিত হয়ে গেলেন এবং ভগবান শংকর সতীদেবীর সঙ্গে চতুর্দিকে চক্ষুচালনা করে দেখতে লাগলেন। ১৭ ॥ 

🔺বিশ্লেষণ — যখন ভগবান বিষ্ণু মোহিনীর রূপের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেই অন্তর্হিত হলেন, তখন ভগবান রুদ্রদেব মাতা সতীকে নিয়ে বৈকুণ্ঠের চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলেন। বৈকুণ্ঠে মূলত ক্ষীর সাগর রয়েছে, যার উপরিভাগে শূণ্য ও নিম্নভাগে ক্ষীর সাগর রয়েছে।

 

ততো দদর্শোপবনে বরস্ত্রিয়ংবিচিত্রপুষ্পারুণ পল্লবদ্রুমে।বিক্রীড়তীং কন্দুকলীলয়া লসদ্‌ দুকূলপর্যস্তনিতন্বমেখলাম্ ।১৮।                           অর্থ — এর মধ্যেই তাঁরা সম্মুখে খুব সুন্দর একটা উপবন দেখতে পেলেন। সেই উপবনে অনেক বৃক্ষ এবং সেই বৃক্ষে নানারকম ফুল ফুটেছে ও লাল লাল পাতায় গাছ ভরে আছে। সেখানে একজন সুন্দরী নারী হাতে বল নিয়ে লোফালুফি খেলছেন। তিনি খুব সুন্দর শাড়ি পরে আছেন এবং তাঁর কটিদেশে চন্দ্রহার শোভা পাচ্ছে। ১৮ 

🔺বিশ্লেষণ — দেখুন ! যেখানে এতক্ষণ ছিল ক্ষীরসাগর, সেখানে হঠাৎ ই উপবন চলে এল। অর্থাৎ ভগবান বিষ্ণুর মায়ার প্রকাশ শুরু হয়েছে এক্ষণে.. শ্রীবিষ্ণু সেই উপবনে নারীরূপ ধারণ করে একটি বল নিয়ে খেলছেন, আর তার দেহ অঙ্গ কেমন ছিল, তিনি কেমন সেটি বর্ণনা করা হচ্ছে এখানের শ্লোকসমূহে…

 

আবর্তনোদ্বর্তনকম্পিতস্তন-প্রকৃষ্টহারোরুভরৈঃ পদে পদে।প্রভজ্যমানামিব মধ্যতশ্চলৎ-পদপ্রবালং নয়তীং ততস্ততঃ ৷৷ ১৯।                                                অর্থ — কন্দুক (বল) উৎক্ষেপণ ও ধারণ করার জন্য তাঁর স্তন ও তার উপরের হার কম্পিত হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল যেন, স্তন ও উরুর ভারে তাঁর ক্ষীণ কটিদেশ প্রতি পদক্ষেপেই ভেঙে পড়ছে। তিনি লাল লাল পাতার মতো চরণে ইতস্তত ভ্রমণ করছিলেন। ১৯ ।  

🔺বিশ্লেষণ:- একটি সাধারণ মনু্ষ্য নারী যদি পুরুষদের আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে কোনো নাট্যমঞ্চে মোহিনী সেজে নৃত্যকরার জন্যে মঞ্চে উপস্থিত হোন। তখন তার সাধারণত মোহিনীর মতো সাজগোজ হবে না। একটু অস্বাভাবিক ভাবেই সাজগোজ করে নাট্যমঞ্চে উপস্থিত হবেন। আর ভগবান বিষ্ণু যখন দৈত্যদের মোহিত করার জন্যে মোহিনী অবতার ধারণ করেছেন। সে যে স্বাভাবিক ভাবে ধারণ করেন নি। এই ১৯ নং শ্লোকে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

 

দিক্ষু ভ্ৰমং কন্দুকচাপলৈশং প্রোথিপুতানায়তলোললোচনাম্। স্বকণবিরাজিতকুগুলোরস-কপোলনীলালকমণ্ডিতাননাম্ ২০।                        অর্থ — কন্দুক এদিক ওদিক চলে গেলে তিনি লাফিয়ে উঠ সেই কন্দুককে বাধা দিচ্ছিলেন। তার জন্যে তাঁর আয়ত চক্ষুর চঞ্চল তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছিল। কর্ণের কুণ্ডলের আভা মুখের উপর পড়ছে এবং তাঁর কুঞ্চিত কেশ মুখের উপর এসে পড়ে মুখের শোভাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ২০ ॥ 

🔺বিশ্লেষণ:-  ভগবান শিবের বরেই, ভগবান বিষ্ণুর মোহিনী অবতার শিবকে কামাগ্র করার জন্যে বিভিন্ন ভাবগম্ভী করতে শুরু করলেন।  ভগবান শিব যে বিষ্ণুকে বর দিয়েছিলেন তাহার প্রমাণ  শিবমহাপুরাণ/রুদ্র সংহিতা/সতীখণ্ড/ ২৫/২৪—ভগবান মহেশ বললেন, হে বিষ্ণু ! তুমি এই মায়াকে গ্রহণ করো , যার নিবারণ করা দেবতাদের পক্ষেও কঠিন আর এই মায়ার প্রভাবেই সমগ্র বিশ্ব মোহিত হয়ে জড়রূপ হয়ে যাবে॥২৪

 

শ্লথদ্ দুকূলং কবরীং চ বিচ্যুতাং সমজাতীং নামকরেণ ।বিনিদ্বতীমনাকরেণ কন্দুকনবি মোহয়ন্তীং জগদাত্মমায়য়া ২১।                                            অর্থ — সুন্দর বাম হাত দিয়ে বিধ্বস্ত বসন ও শিথিল বেণীকে সংযত করে এবং ডান হাত দিয়ে কন্দুককে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে সেই নারী জগতকে স্বমায়ায় মোহিত করতে লাগলেন। ২১ ৷৷ 

🔺বিশ্লেষণ — এখানে মোহিনীর রূপের কিছু বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তিনি বল নিয়ে খেলার সময় যা কিছু ক্রিয়াকলাপ করছিলেন তা বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে যে মোহিনী যখন খেলার ছলে বল তুলেছিলেন ডান হাত দিয়ে তখন নিজের ‘বিধ্বস্ত বসন’ অর্থাৎ (শিথিল) আলগা হয়ে যাওয়া বস্ত্র বাম হাত দিয়ে ধরে রাখলেন। এভাবে তিনি নিজের মায়া দিয়ে জগতকে মোহন করতে লাগলেন।

সেই মায়ার ভয়ংকর প্রভাব দেখুন নিচে শ্লোকে

 

তাং বীক্ষা দেব ইতি কন্দুকলীলয়েট্ ব্রীড়াস্ফুটস্মিতবিসৃষ্টকটাক্ষমুষ্টঃ।স্ত্রীপ্রেক্ষণপ্রতিসমীক্ষণবিহ্বলায়া নাত্মানমন্তিক উমাং স্বগণাংশ্চ বেদ।। ২২।                                         অর্থ — কন্দুক খেলতে খেলতে তিনি স্মিতহাস্যে মহাদেবের দিকে বঙ্কিক ভাবে দৃষ্টিপাত করলেন। মহাদেবের মন আর তাঁর বশীভূত রইল না। তিনি মোহিনীর কটাক্ষপাতে এতই বিহ্বল হয়ে পড়লেন যে, সমস্ত বিস্মৃত হয়ে তাঁর নিকটেই যে সতী ও অনুচরেরা উপস্থিত আছে সে কথাও বিস্মৃত হলেন। ২২ ॥

🔺বিশ্লেষণ — এখানে বলা হয়েছে দেখুন ! মোহিনী খেলতে খেলতে হঠাৎ ই মহাদেবের দিকে বঙ্কিম দৃষ্টিতে অর্থাৎ “বাঁকা কুটিল (কাম উত্তেজক) চাহনি দিয়ে তাকালেন, পাঠকবৃন্দ বুঝে দেখুন, মোহিনী রূপের মাহাত্ম্য ই হল এই — কামকে বৃদ্ধি করা। তাই এই মায়ার প্রভাব হ‌ওয়া স্বাভাবিক বিষয়, যার কারণে ভগবান শিবও লীলা বশত নিজের মনের বশীভূত রাখলেন না।

[ভগবান রুদ্রদেব মোহিনীর মায়ায় কেন আচ্ছন্ন হয়েছেন, তার কারণ নিয়ে শেষের দিকে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ুন ধৈর্য্য সহকারে]

 

তস্যা করাগ্রাৎ স তু কন্দুকো যদা । গতো বিদুরং তমনুব্রজং প্রিয়া। বাসঃ সসূত্রং লঘু মারুতোহহরদ।ভবস্য দেবস্য কিলানুপশ্যতঃ ॥২৩                       অর্থ — সহসা কন্দুকটি মোহিনীর হস্তচ্যুত হয়ে দূরে চলে গেলে মোহিনী তাকে ধরার জন্যে যখন ধাবিত হলেন সেইসময় ভগবান শংকরের সমক্ষেই বায়ু চন্দ্রহারের সঙ্গে তাঁর বস্তু উড়িয়ে নিয়ে গেল । ২৩

🔺বিশ্লেষণ — ভগবান বিষ্ণু মায়ার দ্বারা এমন একটি পরিবেশ রচেছেন তা যেন কামনার বৃদ্ধির সহায়ক হয়ে ওঠে, তাই বাতাসের মাধ্যমে মোহিনীর বস্ত্রহীন হয়ে কামনার উদ্রেক ঘটাও ভগবান বিষ্ণুর মায়ার খেলা মাত্র। আর ভগবান বিষ্ণু এই ভাবেই সমুদ্র মন্থনের সময় দৈত্যদের মোহিত করে। দৈত্যদের মন অমৃত থেকে অন্য দিকে ধাবিত করেছিলেন।

 

এবং তাং রুচিরাপামী দর্শনীয়াং মনোরমাম্ দৃষ্ট্বা তস্যাং মনশ্চক্রে বিষজ্জন্ত্যাং ভবঃ কিল । ২৪।                 অর্থ — মোহিনীর প্রতিটি অঙ্গ মনোরম। একবার দেখলে চোখ ফেরানো যায় না। শুধুমাত্র চোখ নয়, মনও সেখানে বাঁধা পড়ে যায়। তাঁকে এই অবস্থায় দেখে ভগবান ভব তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হলেন। তাঁর মনে হল যে মোহিনীও তাঁর প্রতি আসক্তা হয়েছেন। ২৪ । 

🔺বিশ্লেষণ — এই শ্লোকে সেই মায়ার ভয়ংকর প্রভাব এর বর্ণনা করা হয়েছে, যে মায়ার কবলে পড়লে চোখ তো দূরের কথা মন‌ও সেখানেই পড়ে থাকে। এই দেখে গুণাত্মক ভব আকৃষ্ট হলেন, তারপর তিনি মায়ার প্রভাবে ভাবলেন মোহিনীও হয়তো তাকে কামনা করছেন।

 

তয়াপহৃতবিজ্ঞানস্বকৃতস্মরবিহুলঃভবান্যা অপি পশান্ত্যা গতীহ্রীস্তং পদং যযৌ ৷৷ ২৫।                   অর্থ — তিনি মহাদেবের জ্ঞান কে অপহরণ করে নিলেন। তাঁর হাবভাবে মহাদেবের মনে বিহ্বল ভাব জাগরিত হল। তিনি ভবানীর সামনেই মোহিনীর প্রতি ধাবিত হলেন। ২৫

বিশ্লেষণ — পাঠকবৃন্দ ! দেখুন এখানে শব্দপ্রমাণ সহ বলা হয়েছে যে, মোহিনী ভগবান স্মর (মহাদেব)-এর বিজ্ঞান অর্থাৎ বোধশক্তিকে অপহরণ করে নিয়েছিলেন মায়ার দ্বারা। এবার আপনারাই ভেবে দেখুন, বোধহীন অবস্থায় কোনো ব্যক্তি যা কিছু করে তাতে কি তার উপর কোনো দোষ আরোপ হয় ?

মহেশ্বর নিজের ইচ্ছায় কিছু করছেন না, এটি তো মোহিনীর মোহন করার প্রভাব মাত্র ।

 

সা তমায়াত্তমালোক্য বিবস্ত্রা ব্রীড়িতা ভূশম্।  নিলীয়মানা বৃক্ষেষু হসন্তী নাম্বতিষ্ঠত। ২৬।            অর্থ — মোহিনী পূর্বেই বিবস্ত্রা হয়েছিলেন। ভগবান শংকরকে তাঁর দিকে আসতে দেখে অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে হাসতে হাসতে এক বৃক্ষ থেকে অন্য বৃক্ষের অন্তরালে অন্তর্হিত হয়েও কোথাও স্থির থাকছিলেন না। ২৬ ৷ 

🔺বিশ্লেষণ — এখানে সেই মায়াবী লীলায় সংগঠিত হ‌ওয়ার বিষয়কেই বর্ণনা করা হয়েছে মাত্র । ভগবান বিষ্ণু সেখানে নারীর স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তার হাবভাব ও ভাবগম্ভী প্রকাশ করছিলেন।

 

তামগ্নগাজেদ ভগবান্ ভবঃ প্রমুষিতেন্দ্রিয়ঃ।        কামস্য চ বশং নীতঃ করেণুমির যূথপঃ ।। ২৭।      অর্থ — ভগবান ভব-এর ইন্দ্রিয় আর স্ববশে থাকল না, তিনি কামের বশবর্তী হয়ে হস্তিনীর পশ্চাদ্ধাবমান হস্তীর ন্যায় মোহিনীর পশ্চাদ্ধাবিত হলেন। ২৭ । 

🔺বিশ্লেষণ — এখানে গুণাত্মক ভব (মহাদেব)-এর ইন্দ্রিয় তার নিজের বশে না থাকার কথা বলা হয়েছে, কেননা পূর্ববর্তী ২৫নং শ্লোকেই বলা হয়েছে যে ভগবান রুদ্রের বোধ হরণ করে নিয়েছেন মোহিনীরূপী ভগবান বিষ্ণু। বোধহীন হ‌ওয়ার ফলে তিনি কামের বশবর্তী হলেন।

 

সোহনুব্রজ্যাতিবেগেন গৃহীত্বানিচ্ছতীং স্ত্রিয়ম্।        কেশবন্ধ উপানীয় বাহুভ্যাং পরিষস্বজে।। ২৮।       অর্থ — তিনি তীব্র বেগে ধাবিত হয়ে মোহিনীর কেশাকর্ষণ করে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তাঁকে পিছন হতে বাহু দিয়ে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলেন ॥২৮

সোপগূঢ়া ভগবতা করিণা করিণী যথা।                ইতস্ততঃ প্রসপন্তী বিপ্রকীর্ণশিরোরুহা ।। ২৯।        অর্থ — যেমন হস্তী হস্তিনীকে আলিঙ্গন করে সেইরকম তিনিও মোহিনীকে আলিঙ্গন করলেন। তার হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য মোহিনী এদিক-ওদিক করতে লাগলেন, তাতে তাঁর কেশও এলিয়ে পড়ল। ২৯ ৷ 

আত্মানং মোচয়িত্বাঙ্গং সুরষভভুজান্তরাৎ ।         প্রাদ্রবৎসা পশ্রোণী মায়া দেববিনির্মিতা ৷৷ ৩০।     অর্থ — বস্তুত মোহিনী তো বিষ্ণুদেবের সৃষ্ট মায়া। কোনোপ্রকারে সেই বিপুল- নিতম্বিনী মোহিনী নিজেকে মহাদেবের আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে দ্রুত দৌড়তে লাগলেন । ৩০ 

🔺বিশ্লেষণ“মায়া দেববিনির্মিতা = বিষ্ণুদেবের সৃষ্ট মায়া” — এই শব্দপ্রমাণটি দেখতে পাচ্ছেন ?এরপরেও কি এই ঘটনাকে অশ্লীল বলে নিন্দা করা সাজে ? এখান থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে এই সমস্ত ঘটনাই মায়া মাত্র, মায়া কথার অর্থ – যা সত্য বলে মনে হলেও তা ভ্রম মাত্র। এগুলির বাস্তবিকতা নেই । ভগবান রুদ্র‌ও সেই মায়ার প্রভাবেই বোধশক্তিহীন হয়ে তারপরেই মোহিনীকে পাবার আশায় তার দিকে ধাবিত হয়েছেন কিন্তু সেই মোহিনী আসলেই ভ্রম। তাই যেসব সমকামী নাস্তিকেরা মনে করেন যে মহাদেবের সাথে বিষ্ণুর সহবাস হয়েছে এবং এখান থেকেই সমকামিতার উদ্ভব হয়েছে তারা নিতান্তই মূর্খ আর শাস্ত্রের বিচারধারা সম্পর্কে অনভিজ্ঞ। কেননা,এখানে মোহিনী একজন নারী, যা মায়া মাত্র, তিনি ভগবান বিষ্ণুরূপী পুরুষ, তার সাথে কোনো শারীরিক সম্পর্ক সংঘটিত হয়নি। নীচের শ্লোক গুলিতেই সেই শব্দপ্রমাণ রয়েছে, চলুন দেখা যাক।

 

তস্যাসৌ পদবীং রুদ্রো বিস্ফোরস্তুতকর্মণঃ।      প্রত্যপদ্যত কামেন বৈরিণেব বিনির্জিতঃ । ৩১।      অর্থ — ভগবান রুদ্রও সেই মোহিনীর পশ্চাদ্ধাবিত হলেন। তাঁকে দেখে মনে হল তার শত্রু কামদেব তাকে পরাজিত করেছেন। ৩১ ॥ 

🔺বিশ্লেষণ — এই শ্লোকে পরিষ্কার করে শব্দপ্রমাণ সহ বলে দেয়া হয়েছে যে ভগবান রুদ্র এই লীলা করছেন। শৈবদের আরাধ্য গুণাতীত সদাশিব নয় । কামদেবকে যিনি ভস্ম করেছেন তিনি কি কখনো কামের বশবর্তী হতে পারেন ?

কখনোই নয়, তিনি বৈরাগ্যসম্পন্ন । তাই বৈরাগ্যের শত্রু কাম কে বলা হয়েছে। মোহিনীর মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যেন মনে হচ্ছে ভগবান রুদ্রের (বৈরাগ্যের) শত্রু কামদেব রুদ্রকে কামমোহিত করে পরাজিত করেছেন। কিন্তু মহাদেব কি কখনো কামুক হতে পারে ? চলুন ভাগবত পুরাণ থেকেই প্রমাণ সহ উত্তর দেখাচ্ছি।আপনি উমার সঙ্গে বিচরণ করেন দেখে যে সকল নির্লজ্জ ব্যক্তি আপনাকে উমার প্রতি আসক্ত বা কামুক কিংবা আপনি শ্মশানে বাস করেন বলে আপনাকে হিংস্র ও ক্রুর মনে করে — তারা মূর্খ, আপনার লীলার রহস্য কিছুমাত্র উপলব্ধি করতে পারে না ॥  ভাগবতপুরাণ/৮/৭/৩৩ সুতরাং, পরমেশ্বর শিবকে কামুক বলে তাচ্ছিল্যকারী দয়ানন্দী আর্যসমাজীরা যে কতবড় মূর্খ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। 

 

তস্যানুধাবতো রেতশ্চক্কন্দামোঘরেতসঃ।            শুস্মিণো যূথপস্যেব বাসিতামনু ধাবতঃ ।। ৩২।     অর্থ — ঋতুমতী হস্তিনীর পশ্চাদ্ধাবমান মদোন্মত্ত হস্তীর মতোই তিনি মোহিনীর পশ্চাদ্ধাবিত হলেন¹। মহাদেবের অমোঘ রেত মোহিনীর মায়ায় তাঁর সেই রেত(বীর্য) পাত হয়ে গেল² ॥৩২

🔺বিশ্লেষণ(1) প্রথমেই দেখুন – এখানে ধাবতো অর্থাৎ ধাবমান অবস্থায় রেত পতিত হবার কথা বলা হয়েছে, এখানে সমকামের দৈহিক সমাগম ঘটেনি। সুতরাং যে সমস্ত মূর্খ নাস্তিক সমকামী এই মোহিনী ও মহাদেবের এই প্রসঙ্গ কে সমকামের উৎস বলে প্রচার করছে তারা মহাপাপী ও বোধশূণ্য মাত্র । (2) “ রেত পতিত ” — হয়েছে দেখে ম্লেচ্ছারা ভেবে বসেছে, সাধারণ মনুষ্যের শুক্র বীর্যের মতোই মহাদেবের‌ও বীর্য-শুক্র বের হয়েছে। প্রানী তথা মনুষ্যের শুক্র আর দৈবী শুক্র যে এক নয়। এটা ম্লেচ্ছারা বুঝতে চায় না।

রেত — শব্দের অর্থ শুধু প্রজননের বীর্য-শুক্র নয়। রেত বা বীর্যশব্দের বিভিন্ন অর্থ হতে পারে। এই প্রসঙ্গে “রেত পতিত” বলতে যা বোঝানো হয়েছে তা মূলত “ঘর্মজল পতিত হ‌ওয়া” কে বোঝানো হয়েছে।  যারা অপপ্রচার করে তাদের মান্য  দয়ানন্দের সত্যার্থ প্রকাশ থেকেই প্রমাণ করা যাক

পাঠকবৃন্দ! দেখুন — রেত বা বীর্য শব্দের অর্থ শুধু শুক্র নয় বরং জল‌ও হয়। সুতরাং, মোহিনীর মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে মহাদেবের ঘাম পতিত হয়েছিল বিভিন্ন স্থানে। দৈবী বিষয়ের সাথে মনুষ্যের বিষয়কে এক দৃষ্টিকোণে বিচার করা অনুচিত। এ কথা আমাদের পুরাণ শাস্ত্র নিজেই নির্দেশ দিয়েছে। যেমন মৎসপুরাণ/অধ্যায় নং ৪/ শ্লোক ৫-৬ বলেছেন যে, যেমন ভাবে সাপের মার্গ সাপ তথা পাখিদের আকাশে চলার মার্গ শুধু পাখিরাই জানতে পারে, ঠিক তেমন ভাবেই দিব্য জীবের(দেবতার) অচিন্ত্য মার্গের গতিপ্রকৃতি দিব্যজীব অর্থাৎ দেবতারাই বোধগম্য করতে পারে, সে বিষয়ে সাধারণ মানুষ তা বোধগম্য করতে পারে না ॥৫ হে রাজেন্দ্র ! কেননা, দেবতাদের কার্য বা অকার্য , শুভ বা অশুভ ফল প্রদানকারী হয় না। এই কারণে, সেই দেবতাদের বিষয়ে মনুষ্য মস্তিষ্ক দিয়ে বিচার করা শ্রেয়কর নয় ॥৬

পৌরাণিক মান্যতা অনুযায়ী পুরাণের প্রত্যেকটি বিষয়ের কোন প্রসঙ্গের মধ্যে কি ভাবার্থ রয়েছে তা পৌরাণিকরাই ব্যাখ্যা করতে পারে, বাইরে থেকে কেউ এসে পুরাণের একটি শব্দের অর্থ নিজের ইচ্ছে মতো বদলে কটু দৃষ্টিকোণের মাধ্যমে বিচার করলেই তা যে পুরাণের সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে না, বরং পুরাণের বিষয়গুলি ধৈর্য্য পূর্বক সঠিক গুরুর কাছে গিয়ে এর মীমাংসা ও ব্যাখ্যা জানা উচিত । 

মহাদেবের তপস্যা করে সাবর্ণি মুনি মহাদেবের কৃপায় পুরাণ বিষয়ের বিতর্কিত স্থানকে মীমাংসা করার জন্য রচনা করেছিলেন – পৌরাণিক সংহিতা নামক স্বতন্ত্র শৈবশাস্ত্র (তথ্যসূত্র : কূর্মপুরাণ/পূর্বভাগ/অধ্যায় ২৫/শ্লোক নং ৪১-৪২)। সেই পৌরাণিক সংহিতার ২য় অধ্যায়ের অন্তর্গত ২নং শ্লোকে, ৪নং শ্লোকে ও ৬নং থেকে ১১নং শ্লোকে বলা হয়েছে —

देवप्राणिनां सति शुक्रः समानः ॥२                                रेतः वा जलं वा स्वेदविन्दुः वा दैवशक्तिं ।                      तेज वा देवंशं वा वीर्यं ज्ञायते ॥४।                      प्राचीनकाले अन्धकासुरः महादेवस्य स्वेदबिन्दुतः।            इति जातः सः स्वेदबिन्दुः रेत स वीर्यम् इति उच्यते ॥६।      भौ तिकलोकस्य जीवाः कामात् एव स्खलनं कुर्वन्ति ।    परन्तु देवाःअस्मिन्धनधामे केनचित् महात्मा वा शुभशक्तिं॥ ७ वा अवतारयितुं जगतः कृते दिव्यं वीर्यं स्वभागेभ्यः। दिव्यतारूपेण पृथक् कुर्वन्ति वा क्षिपन्ति वा ॥८।              यदि सः लीलायाः तुलनां कामोद्दीपकक्रियातः ।            मुक्तेन वीर्येण सह करोति तर्हि सः अवश्यमेव ।      योनिभ्रमणं म्लेच्छाः इति प्रसिद्धः भविष्यति ॥९।             यतो हि दिव्यवीर्यस्य मानववीर्यस्य च मध्ये ।        आकाशस्य पृथिव्याः च भेदः भवति यथा दूरतः ।        आकाशं पृथिवीं च दृष्ट्वा विलीयन्ते इव भासते ॥१०।      परन्तु वास्तविकार्थे तस्य भ्रमः एव मनः यथा ।              दिव्यं वीर्यं मानववीर्यं च यद्यपि श्रवणेन समानं ।           तथापि ते सर्वथा भिन्नाः स्वभावाः न संशयः। ॥११

অর্থ —বীর্য কি দেবতা ও জীবের ক্ষেত্রে সমান ?॥২

রেত , জল , স্বেদবিন্দু(ঘাম বিন্দু), দৈবশক্তি, তেজ বা দৈবাংশকেও বীর্য বলে জানবে ॥৪ প্রাচীনকালে মহাদেবের স্বেদবিন্দু থেকে অন্ধকাসুর নামের এক দৈত্য উৎপন্ন হয়েছিল, এই স্বেদবিন্দুই রেতস্বরূপ বীর্য বলে জানবে ॥৬ জড় জগতের জীবগণ কেবলমাত্র কামনার বশবর্তী হয়েই বীর্যপাত করে , কিন্তু দেবতাগণ জগতের হিতার্থে কোনো মহাত্মা বা শুভশক্তিকে এই ধরাধামে অবতীর্ণ করানোর নিমিত্তে তাদের অংশ থেকে উদ্ভূত দেবাংশস্বরূপ বীর্যকে লীলাবশত তাহাদের দিব্যশরীর থেকে পৃথক করেন বা নিক্ষেপ করেন ॥৭-৮ এহেন লীলাকে যে কামউদ্দিপক ক্রিয়া থেকে নির্গত বীর্যের সঙ্গে তুলনা করেন তাকে নিশ্চয় মনুষ্য যোনিতে বিচরণকারী ম্লেচ্ছস্বরূপ বলে জানবে ॥৯ কারণ , দৈববীর্য ও মনুষ্য বীর্যের মধ্যে আকাশ ও ভূমির সমান পার্থক্য বর্তমান, যেমন আকাশ ও ভূমিকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় তারা মিশে আছে ॥১০ কিন্তু প্রকৃত অর্থে তা মনের ভ্রম, তেমনই দৈববীর্য আর মনুষ্যবীর্য শ্রবণে এক হলেও টা সম্পূর্ন ভিন্ন প্রকৃতির । এতে কোনো সন্দেহ নেই ॥১১

🔍পর্যবেক্ষন — দেখুন দেখুন পাঠকবৃন্দ, বীর্য কথার অর্থ ঘর্ম জল কে বোঝানো হয়েছে, এমনকি ঘাম থেকে অন্ধকাসুর জন্মেছিল বলে শব্দ প্রমাণ রয়েছে, সুতরাং ঘামের জলবিন্দুকেই বীর্য বা রেত বলা হয় ।যারা এটি বুঝতে না পেরে দৈববীর্যকে সাধারণ মানুষের রেত-বীর্যের মতো মনে করে তাদের ম্লেচ্ছ বলে চিহ্নিত করেছেন সাবর্ণী মুনি। কারণ, দেবতাদের বীর্য আর মানুষ তথা প্রানীর বীর্য বলতে ভিন্ন অর্থ বোঝায় । দয়ানন্দ সরস্বতী‌ একটা আস্ত গর্দভ ছিল আর তার নিয়োগী চ্যালা আর্যসমাজীরা হচ্ছে তার চেয়েও দশগুণ বরাহ শাবক, থিয়োসোফিক্যাল সোসাইটি নামক খ্রীষ্টান দের দালাল।

ভালো করে লক্ষ্য করে দেখুন, উপরোক্ত শ্লোকে কি কোথাও মহাদেবের যৌনাঙ্গ/শিশ্ন থেকে রেত পতিত পতিত হবার কথা বলা হয়েছে ? না… বলা হয়নি।

তাহলে কিসের ভিত্তিতে আর্যসমাজী তথা অসনাতনীরা মহাদেবের রেত পতিত হ‌ওয়াকে অশ্লীল বলে মিথ্যাচার করেছেন ? অনুমানের ভিত্তিতে ? কিন্তু আপনাদের অনুমান‌ও ভুল,  কারণ, রেত কথার অর্থ এক্ষেত্রে ঘামের জল । সাধারণ ঘামের জল নয়, দৈবী এটি। প্রমাণ করা হয়েছে সেটি উপরেই।অবশ্য দয়ানন্দীরা তো নিয়োগী ভণ্ড। তাদের তো সবসময় চোখে অশ্লীল ই ধরা পড়ে, কেননা দয়ানন্দ সরস্বতীও ছিল নন্নীজানবল্লভ, রমাবাইয়ের উপপতি। কিন্তু দয়ানন্দের ভুলগুলো আর তাদের চোখে ধরা পড়ে না, দয়ানন্দ সরস্বতীর রচিত সত্যার্থ প্রকাশের একাদশ সমুল্লাসে শিবপুরাণ সমীক্ষা নামক মিথ্যাচারের আমরা শৈবরা আপাদমস্তক খণ্ডন করে দয়ানন্দ সরস্বতীকে মূর্খ, অর্ধসত্য, চতুর, মিথ্যাবাদী ম্লেচ্ছ প্রমাণ করেছি। সেসবের জবাব কোথায় ? জবাব না দিয়ে পুরাণ নিয়ে দিনরাত মিথ্যাচার করাই আর্যসমাজীদের কাজ । যেমন গুরু তার তেমন চ্যালা । আর অসনাতনীদের আর কাজ কি দিনরাত নারী ভোগ‌ই যাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্যে তারা তো সব জায়গাতেই যৌনতা খুঁজে পাবে এটাই স্বাভাবিক।যাই হোক, এবার পরবর্তীত শ্লোকগুলি দেখা যাক।

 

যত্র যত্রাপতন্মহ্যাং রেতস্তস্য মহাত্মনঃ।                    তানি রূপ্যস্য হেম্নশ্চ ক্ষেত্রাণ্যাসন্নহীপতে। ৩৩।    অর্থ:- ভগবান শংকরের রেত পৃথিবীতে যেখানে যেখানে পড়েছিল সেখানেই সোনা ও রূপোর ক্ষেত্র³ তৈরি হল ৩৩

রেত থেকে সোনা ও রূপার ক্ষেত্র তৈরি হবার কথাকে আক্ষরিক অর্থে ধরলেও কোনো দোষ যুক্ত হয়না, কারণ — প্রথমেই পুরান শাস্ত্রে বলে দেয়া হয়েছে যে দৈবীগত ও মনুষ্যগত পার্থক্য রয়েছে। তাই মানুষের রেত আর দিব্য রেত অর্থাৎ দিব্য ঘাম দুটিই ভিন্ন প্রকৃতির। মানুষের রেত -এর সাথে দৈবী রেত কে তুলনা করাই অজ্ঞতা। তাই দৈবী রেত অর্থাৎ মহাদেবের ঘর্মজল থেকে সোনা রূপা সৃষ্টি হ‌ওয়া কোনো অবাস্তব ঘটনা নয়। কেননা নর্মদা নদীও মহাদেবের ঘর্মজল থেকে উৎপন্ন হয়েছেন, অন্ধকাসুর‌ও মহাদেবের ও মাতা পার্বতীর ঘর্মজল হতে উৎপন্ন হয়েছিলেন। ভগবান রুদ্রের চক্ষুর জল থেকে রুদ্রাক্ষ বৃক্ষ উৎপন্ন হয়েছিল। যখন সূর্য চন্দ্র গ্রহ নক্ষত্র তথা সমগ্র বিশ্ব পরমেশ্বর থেকে প্রকট হচ্ছে তখন তো আশ্চর্য বা অবাস্তব মনে হয় না আপনাদের, নদীনালা সাগর থেকে বাষ্পীভূত হয়ে মেঘে পরিনত হয়ে বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে বর্ষিত হয়, এগুলি আশ্চর্যের বিষয় মনে হয় না আপনাদের, আর পুরাণকে নিন্দা করার জন্য এই অপকৌশলের মার্গ অবলম্বন করেন আপনারা আর্যসমাজীরা ।যদিও এখানে সোনা ও রূপার ক্ষেত্র কথার আক্ষরিক অর্থ প্রয়োগ হবে না, কারণ — এখানে সোনা রূপা কথার অর্থ দিব্য ঐশ্বর্যকে বোঝানো হয়েছে, মহাদেবের ঘর্মজল যেখানে পতিত হয়েছিল সেই সেই স্থান ঐশ্বর্যসম্পন্ন হয়ে উঠেছিল । তৈত্তিরীয় আরণ্যকের দশম প্রপাঠকে পরমেশ্বর মহাদেবকে বলা হয়েছে হিরণ্যবর্ণের দেহ ধারণকারী, যার বাহু হিরণ্যবর্ণের,যার রূপসৌন্দর্য হিরণ্য অর্থাৎ স্বর্ণবর্ণের বা দিব্য ঐশ্বর্যসম্পন্ন – নমো হিরণ্যবাহবে হিরণ্যবর্ণায় হিরণ্যরূপায় হিরণ্যপতয়ে অম্বিকাপতয় উমাপতয়ে পশুপতয়ে নমো নমঃ।।’ অর্থ — যার হিরণ্যবাহু, হিরণ্যবর্ণ,হিরণ্যরূপ রয়েছে, যিনি হিরণ্যপতি,যিনি ভগবতী অম্বিকার পতি, যিনি ভগবতী উমা-পার্বতীর স্বামী সেইপশুপতি শিবকে নমস্কার করি। দেখুন, আরণ্যক বলছে পরমেশ্বর শিবের দেহ‌ই স্বর্ণ তথা ঐশ্বর্যসম্পন্ন ।সুতরাং ভগবান রুদ্রের ঐশ্বর্যসম্পন্ন দেহ থেকে দিব্য ঘর্মজল নদী, সরোবর, পাহাড়, বন, উপবন এবং যে যে স্থানে ঋষিরা বাস করতেন সেই সব স্থানে পতিত হয়ে তা তপঃ সম্পন্ন ঐশ্বর্য প্রাপ্ত হয়েছিল । এটিই হল প্রকৃত অর্থ।কিন্তু,

“পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি” এই উপমার প্রকৃত অর্থ না বুঝেই যদি কেউ চাঁদ কে রুটি মনে করে তাহলে তা হল মূর্খতা, ঠিক একই ভাবে পুরাণের ভাবার্থ না বুঝেই আর্যসমাজীরা মূর্খের মতো ‘পূর্ণিমার চাঁদকে সত্যিই রুটি’ ভেবে নিয়েছে। তাই পুরাণের দু চারটে শ্লোক নিয়ে মিথ্যাচার করে পুরাণকে অবৈজ্ঞানিক, অশ্লীল, কাল্পনিক বলে প্রচার করে চলেছে। আসলে, ম্লেচ্ছদের মস্তিষ্কসম্পন্ন হলে এমন‌ই ভাবা স্বাভাবিক ।

 

সরিৎ সরস্তু শৈলেষু বনেষুপবনেষু চ।                        যত্র ক্ব চাসষয়স্তত্র সন্নিহিতো হরঃ ।। ৩৪।           অর্থ:- হে পরীক্ষিৎ ! নদী, সরোবর, পাহাড়, বন, উপবন এবং যে যে স্থানে ঋষিরা বাস করতেন মহাদেব সেইসব স্থানে মোহিনীকে অনুসরণ করছিলেন। ৩৪ ॥

স্কন্নে রেতসি সোহপশ্যদাত্মানং দেবমায়য়া।          জড়ীকৃত নৃপশ্রেষ্ঠ সন্যবৰ্তত কশ্মলাৎ ॥ ৩৫।        অর্থ — হে মহারাজ! বীর্যপাত (ঘর্মজল পতিত) হওয়ার পর তাঁর স্মৃতি ফিরে এল¹। তিনি বুঝতে পারলেন যে, বিষ্ণুদেবের মায়া তাঁকে বিমোহিত করেছে²। তখনই তিনি সেই কর্ম থেকে নিবৃত্ত হলেন³। ৩৫

🔺বিশ্লেষণ(1) বীর্যপাত (ঘর্মজল পতিত) হওয়ার পর তাঁর স্মৃতি ফিরে এল — এখানে বীর্যপাত কথার অর্থ “ঘর্ম জল” অর্থাৎ ঘাম । সেই ঘর্ম পতিত হবার পর গুণাত্মক শিবের স্মৃতি ফিরে এসেছে বলা হয়েছে শ্লোকে। সুতরাং, শিব মোহিনীর সাথে যা কিছু ব্যবহার করেছেন তা তিনি নিজেই জ্ঞাত ছিলেন না, তাই এখানে পরিস্কার করেই বলা হয়েছে যে মহাদেবের ঘর্মজল পতিত হতেই তার স্মৃতি ফিরে এল।  (2) ভগবান বিষ্ণুর মায়া তাঁকে বিমোহিত করেছে — দেখুন ! শিবের স্মৃতি ফিরতেই বুঝলেন যে , এতক্ষণ তিনি শ্রীবিষ্ণুর মায়ায় মোহিত হয়ে ছিলেন । তাই এই ঘটনা কোনো বিশেষ কিছু নয় । (3) তিনি সেই কর্ম থেকে নিবৃত্ত হলেন — মোহিনীর মায়ায় মহাদেব অজ্ঞাতসারেই ছুটছিলেন, কিন্তু তিনি নিজের বোধশক্তি ফিরে পেয়েই সেই ছোটাছুটি থেকে বিরত হলেন। এর থেকে এটিই প্রমাণিত হয় যে, মহাদেব এখানে নিজের ইচ্ছায় কিছু করেননি, যা হয়েছে সবটাই ভগবান বিষ্ণুর মায়ার খেলা মাত্র। তাই তিনি সেটি জেনেই ছোটাছুটি থেকে বিরত হলেন ।

 

অথাবগতমাহাত্ম্য আত্মনো জগদাত্মনঃ । অপরিজ্ঞেয়বীর্যস্য ন মেনে তদু হাদ্ভুতম্।। ৩৬।          অর্থ — তখন তিনি জগদাত্মস্বরূপ বিষ্ণুর মহিমা বুঝে এই প্রসঙ্গকে আর আশ্চর্যজনক বলে মনে করলেন না¹। তিনি জানতেন যে বিষ্ণুর এই মায়ার শক্তি প্রবল, তাঁর মায়াকে জানা এত সহজ নয়। ৩৬ ॥

🔺বিশ্লেষণ(1) এই শ্লোকের মধ্যে খুব সুন্দর ভাবেই বলা হয়েছে যে, মহাদেব এই ঘটনাকে আশ্চর্যজনক বলে গণ্য‌ই করলেন না, কারণ হল এসব ই মায়া অর্থাৎ ভ্রম মাত্র। তাই মহাদেব এই প্রসঙ্গ নিয়ে লজ্জিত‌ও হননি, কেননা লজ্জার মতো কিছু হ‌য়‌ওনি। পাঠকবৃন্দ ! ভেবে দেখুন – যেখানে স্বয়ং মহাদেব এই মায়ার প্রভাব কে জেনে লজ্জিত হননি, সেখানে আর্যসমাজী তথা অসনাতনীরা আগবাড়িয়ে বেজায় লজ্জিত হয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে কুকর্মটা আসলে দয়ানন্দীদের গাজর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীই করেছিল..😆 তাই এত লজ্জা তাদের। (2) “বীর্যস্য অর্থাৎ শক্তি” — এই শব্দ দ্বারা উক্ত শ্লোকে বিষ্ণুর অপার বীর্য বলে দাবি করা হয়েছে যার অর্থ হল — শক্তি । পাঠকবৃন্দ ! এবার বিচার করে দেখুন এইখানে অসনাতনীদের দাবী অনুযায়ী যদি এই বীর্য শব্দের অর্থ যদি “মনুষ্যের মতো বীর্য” বলে ধরা হয় তাহলে এর অর্থ‌ই এখানে সাবলীল বা প্রসঙ্গের সাথে মিল খেতো না। সুতরাং বীর্য শব্দের অর্থ শক্তি বা ক্ষমতাকেও বোঝায়। এটি দয়ানন্দ সরস্বতীর নিয়োগী চ্যালাদের মাথায় ঢুকবে না, ওদের মাথায় হয়তো দয়ানন্দ সরস্বতীর বীর্য ভর্তি হয়ে রয়েছে ।

 

তমবিক্লবমব্রীড়মালক্ষ্য মধুসূদনঃ।                          উবাচ পরমপ্রীতো বিভ্রৎস্বাং পৌরুষীং তনুম্।। ৩৭।  অর্থ — বিষ্ণু দেখলেন শংকর এর জন্যে বিষণ্ণ বা লজ্জিত হননি, তখন তিনি পুনরায় পুরুষ শরীর ধারণ করে তাঁর সম্মুখে আবির্ভূত হলেন ও প্রসন্ন হয়ে বললেন। ৩৭ 

🔺বিশ্লেষণ — বিষ্ণু দেখলেন যে মহাদেব কিছুক্ষণ মোহিত হলেও তিনি নিজেই তা থেকে বেরিয়ে এসে সব জ্ঞাত হয়েছেন, আর এসবকেই মহাদেব মায়া বলে জেনে তিনি লজ্জিত হননি, তখন বিষ্ণু তার মোহিনী রূপ ত্যাগ করে পুনরায় পুরুষ অর্থাৎ বিষ্ণুশরীর ধারণ করে মহাদেবর সামনে এসে দাড়ালেন ।

 

শ্রীভগবানুবাচ ।                                                  দিষ্ট্যা ত্বং বিবুধশ্রেষ্ঠ নিষ্ঠামাত্মানা স্থিতঃ।                  যন্মে স্ত্রীরূপয়া স্বৈরং মোহিতোঽপ্যঙ্গ মায়য়া।। ৩৮। অর্থ — শ্রীভগবান বিষ্ণু বললেন — হে দেবশিরোমণি ! আপনি আমার নারীরূপের মায়ায় মোহিত হয়েও আবার নিজের প্রকৃতি লাভ করে স্থির চিত্ত হয়েছেন, এ অতি আনন্দের কথা! ৩৮

🔺বিশ্লেষণ — ভগবান বিষ্ণুই প্রমাণ করে দিচ্ছেন যে, মহাদেব বিষ্ণুর মায়ার ভ্রমে পড়ে বোধশূণ্য হলেও পুনরায় সেই বোধ প্রাপ্ত করে নিয়ে এই সবকিছু কে মায়া বলে জেনে স্থির হয়েছেন। সুতরাং ভগবান মহাদেব যে এসব কর্ম নিজের ইচ্ছায় করেননি তা আবারো প্রমাণিত হল।

 

কো নু মেঽতিতরেন্মায়াং বিষক্তস্ত্বদৃতে পুমান্ । তাংস্তান্বিসৃজতিং ভাবান্দুস্তরামকৃতাত্মভিঃ । ৩৯।          অর্থ — আমার অপার মায়া। এ নানাপ্রকার হাবভাব দিয়ে এমন মোহজাল সৃষ্টি করে যে অজিতেন্দ্রিয় ব্যক্তিরা কোনোভাবেই তার হাত থেকে নিষ্কৃতি পায় না। আপনি ব্যতীত আর কে আছে যে, একবার আমার মায়ার বশীভূত হয়ে নিজেকে মুক্ত করতে সমর্থ হয়েছে ? ॥৩৯

🔺বিশ্লেষণ — এই সম্পূর্ণ শ্লোকে বিষ্ণু পরিষ্কার করে সেই কথা গুলিই বলছেন, যা আমরা উপরোক্ত শ্লোকগুলির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছিলাম। মোহিনীর হাবভাবেই কামভাব জাগরিত হয়। যাদের ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণে থাকে না তারা এই মোহিনীর মায়া থেকে নিস্তার পায় না কোনোভাবেই, কিন্তু কৈলাসপতি মহাদেব যেহেতু ইন্দ্রিয়কে জয় করেছেন তাই এই মায়া থেকে বেরিয়ে আসা একমাত্র।

চলুন পরবর্তী শ্লোক দেখা যাক…..

 

সেয়ং গুণময়ী মায়া ন ত্বামভিভবিষ্যতি।                     ময়া সমেতা কালেন কালরূপেণ ভাগশঃ । ৪০।          অর্থ — যদিও আমার এই মায়া অনেক মহান ব্যক্তিকেও মোহিত করে দেয়, তবু এ আর কখনো আপনাকে অভিভূত করতে পারবে না। সৃষ্টির জন্য যে কাল প্রকৃতিকে সত্ত্বাদি গুণে বিভক্ত করে, সে আমারই রূপ অর্থাৎ আমিই সেই কাল ; সুতরাং আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সে রজোগুণের সৃষ্টি করতে পারে না ॥৪০

🔺বিশ্লেষণ — এখানে বিষ্ণু মহাদেবের এই জিতেন্দ্রীয় স্বভাব কে দেখে বললেন যে, যেহেতু মহাদেব একবার এই মোহিনীর মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে তার থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিয়ে এই মোহিনীর মায়ার স্বরূপ জেনে গিয়েছেন তাই মহাদেবকে আর কখনোই এই মায়া আচ্ছন্ন করতে পারবে না।

 

শ্রীশুক উবাচ ।                                                  এবং ভগবতা রাজন শ্রীবৎসাঙ্কেন সৎকৃতঃ ।          আমন্ত্র্য তং পরিক্রম্য সগণঃ স্বালয়ং যযৌ ॥৪১।    অর্থ —শ্রীশুকদেব বললেন—হে রাজন! এইভাবে শ্রীবৎসাঙ্ক (শ্রীবৎসচিহ্নযুক্ত) ভগবান বিষ্ণু শংকরকে অভ্যর্থনা করলেন। তখন শংকর বিষ্ণুর নিকট বিদায় নিয়ে, পরিক্রমাপূর্বক প্রমথদের সঙ্গে নিজ ধামে কৈলাসে চলে গেলেন। ৪১ ॥ 

 

আত্মাংশভূতাং তাং মায়াং ভবানীং ভগবান্‌ভবঃ।শংসতামৃষিমুখ্যানাং প্রীত্যাঽচষ্টাথ ভারত ॥৪২             অর্থ —হে ভরতবংশশিরোমণি! ভগবান শংকর শ্রেষ্ঠ ঋষিদের সভায় অর্ধাঙ্গিনী সতীদেবীকে বিষ্ণুর অংশে আবির্ভূতা মোহিনীর কথা প্রীতিভরে শোনালেন। ৪২ ॥ 

🔺বিশ্লেষণ — এই শ্লোকে বলা হয়েছে যে, মহাদেব বিষ্ণুর এ কথা শুনে কৈলাসে চলে এলেন, আর বিষ্ণুর এই মোহিনীর মায়ার স্বরূপ সম্পর্কে সতীদেবী ও ঋষি তথা প্রমথগণেদের জানাতে লাগলেন । যদি মহাদেবের সাথে মোহিনী অবতার অস্বাভাবিক ঘটনা থাকতো থাকতো। তাহলে মহাদেব অবশ্যই গোপন রাখতেন। কিন্তু তিনি, মাতা সতী দেবী সহ বিভিন্ন ঋষিদের মোহিনী অবতার লীলা সমূহ প্রীতিভরে বলতে লাগলেন ।

 

অপি ব্যপশাস্ত্বমজস্য মায়াং পরস্য পুংস পরদেবতায়াঃ।অহং কলানামৃষভো বিমুহ্যে যয়াবশোহন্যে কিমতাস্বতন্ত্রাঃ ।। ৪৩।                    অর্থ — হে দেবী! তুমি পরদেবতা বিষ্ণুর মায়াদর্শন করলে তো! শোন, আমি সমস্ত বিদ্যা ও কলাকৌশলের অধীশ্বর¹ এবং স্বতন্ত্র² হয়েও এই মায়ায় বিবশ হয়ে মোহিত হলাম। অন্যেরা তো অজিতেন্দ্রিয়, অতএব তারা তো মোহিত হবেই, এতে আশ্চর্য হওয়ার আর কী আছে? ॥ ৪৩

🔺বিশ্লেষণ —  (1) আমি সমস্ত বিদ্যা ও কলাকৌশলের অধীশ্বর — গুণাত্মক ভগবান রুদ্র গুণাতীত রূপে সদাশিব, তাই তিনি সমগ্র বিদ্যার অধীশ্বর । সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত শাস্ত্র তার থেকেই উৎপত্তি হয়েছে। তৈত্তিরীয় আরণ্যকেই তার প্রমাণ রয়েছে । কৃষ্ণ-যজুর্বেদের তৈত্তিরীয় আরণ্যক -এর ১০ম প্রপাঠক-পরিশিষ্ট ভাগের ২১নং অনুবাকে বলা হয়েছে, ॐ ঈশানঃ সর্ববিদ্যানাং ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং।ব্রহ্মাধিপতির্ব্রহ্মণোঽধিপতির্ব্রহ্মা শিবো মে অস্তু সদাশিবোম্ ॥অর্থ — যিনি সমস্ত বিদ্যার প্রকটকারী ঈশান, যিনি সমস্ত চরাচর জগতের ঈশ্বর, যিনি স্বয়ং ব্রহ্মার‌ও সৃষ্টিকর্তা, ব্রহ্মার অধিপতি, যিনি সকল কিছুর মঙ্গল বিধান করেন, সেই পরমেশ্বর সদাশিবকে প্রণাম করি । সুতরাং, পরমেশ্বর শিব হলেন সর্ব কলা-বিদ্যার অধিপতি । (২) স্বতন্ত্র — দেখুন দেখুন ! ভাগবত পুরাণে পরমেশ্বর শিব নিজেকে স্বতন্ত্র বলে দাবি করেছেন। যার অর্থ হল — ভগবান রুদ্র কারোর অধীনস্থ নন, তিনি স্বাধীন ও নিজের ইচ্ছে মত লীলা করেন । কিন্তু তারপরেও তিনি ভগবান বিষ্ণুর মায়ায় মোহিত হয়ে গেলেন। এখানে কিছু সংশয় তৈরি হবে অনেকের মনে। অনেকে মনে করবেন যে, শিব যদি স্বতন্ত্র হন তবে তিনি বিষ্ণুর মায়ায় আচ্ছন্ন হলেন কিভাবে? বৈষ্ণবেরা এটা দেখিয়ে বলবে যে, শিবের চেয়েও বিষ্ণুর শক্তি বেশি, তাই বিষ্ণুর মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিলেন শিব। বিষ্ণুই সর্বশক্তিমান ।         

হ্যাঁ বিষ্ণুই সর্বশক্তিমান, সে সাথে সাথে ভগবান শিবও সর্ব শক্তিমান।  এক ঈশ্বরই বিষ্ণু রূপে আমাদের পালন করেন আবার শিব রূপে আমাদের ধ্বংশ করেন। হরি হর এক, বৃহন্নারদীয় পুরাণ পাতায় পাতায় হরি হরের সাথে ভেদাভেদ করতে নিষিদ্ধ করেছে। এই পুরাণের (১৫/২১৪;২১৫) বলা আছে যে, – হরি হরে অভেদ বুদ্ধি করিয়া তাঁহাদের পুজা কর,যে ব্যক্তি, তাহাদের ভেদ জ্ঞান করে, তাহাদের অযুত অযুত ব্রহ্মহত্যার পাপ হয়।শিবই সাক্ষাৎ বিষ্ণু, বিষ্ণুই সাক্ষাৎ শিব, এতদুভয়ের ভেদবুদ্ধি যে করে, সে, কোটি কোটি বার নরকে গমন করে। অর্থাৎ, হরি হর তারা একজনই। মনুষ্যদের শিক্ষা দেওয়ার জন্যে বিষ্ণু (ঈশ্বর নিজেই) মোহিনী অবতার ধারণ করে, শিব (ঈশ্বর নিজেই) মোহিত হয়ে। ঈশ্বর আমাদের এই শিক্ষা দিলেন যে, মোহিনী মায়া মাত্র। মায়া কথার অর্থ – যা সত্য বলে মনে হলেও তা ভ্রম মাত্র।

 

আর্যসমাজী তথা অসনাতনীরা প্রশ্ন তোলবে যে

সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তিনি কি কখনো মায়াগ্রস্ত হতে পারেন? যারা এমন প্রশ্ন করবেন তাদের জন্য পুরাণ থেকেই জবাব দিচ্ছি। পরমেশ্বর ভগবান শিব নিজের সাথে বিষ্ণুকে সমানতা প্রদান করেছেন।

ঈশ্বর উবাচ। বৎস প্রসন্নোঽস্মি হরে যতস্ত্বমীশাত্বমিচ্ছন্নপি সত্যবাক্যম্। ব্রুয়াস্ততস্তে ভবিতা জনেষু সাম্যং ময়া সৎকৃতিরপ্যলপ্সি॥৩১ ইতি দেবঃ পুরা প্রীতঃ সত্যেন হরয়ে পরম্। দদৌ স্বসাম্যমত্যর্থং দেবসঙ্গে চ পশ্যতি।৩৩ [তথ্যসূত্র : শিবমহাপুরাণ/বিদ্যেশ্বর সংহিতা/ ৭/৩১-৩৩] অর্থ — পরমেশ্বর শিব বললেন, হে  বিষ্ণু ! আমি তোমার ওপর অত্যন্ত প্রসন্ন হয়েছি। কারণ, নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার কামনা করেও তুমি সত্য বাক্য বলেছো । এই কারণে, তুমি আমার সমান‌ই প্রতিষ্ঠিত হবে ও সৎকার প্রাপ্ত করবে ॥৩১ এইভাবে পরমেশ্বর ভগবান হর শ্রীবিষ্ণুর সত্যনিষ্ঠার দ্বারা প্রসন্ন হয়ে দেবতাদের সমক্ষে বিষ্ণুকে নিজের সমানতা (অভেদ ) প্রদান করেছিলেন ॥৩৩ 

উপরোক্ত মহাদেবের বিষ্ণুকে দেয়া বরদানের ফলে বিষ্ণু , ভগবান শিবের সমতুল্য শক্তির অধিকারী হলেন। অর্থাৎ লীলা বশত নিজেই নিজকে বর দিয়ে আরেকটি (বিষ্ণু) রূপকে নিজের সমকক্ষ করলেন। মূলত যখন ঈশ্বর কোনো রূপ ধারণ করে লীলা কার্য করেন। তখন নিজেও  কর্ম করেন। বিষ্ণুর (ঈশ্বরের শক্তি) রুদ্রদেবের (ঈশ্বরের) উপর প্রভাব বিস্তার করবে এটিই স্বাভাবিক।

 

পরমেশ্বর শিব, ভগবান বিষ্ণুকে , এমন এক মায়াশক্তির বর প্রদান করেছিলেন, যার থেকে নিস্তার পাওয়া দেবতাদের পক্ষেও অসম্ভব।

উপরেও বর্ণণা করেছিলাম, পাঠকের বুঝার সুবিধার্থে আবার শ্লোক সহ বর্ণণা করছি। মহেশ উবাচ। মায়া চাপি গৃহাণোমাং দুঃপ্রণোদ্যাং সুরাদিভিঃ। যযা সম্মোহিতং বিশ্বমচিদ্রূপং ভবিষ্যতি ॥২৪ [তথ্যসূত্র : শিবমহাপুরাণ/রুদ্র সংহিতা/সতীখণ্ড/ ২৫/২৪] অর্থ — ভগবান মহেশ বললেন, হে বিষ্ণু ! তুমি এই মায়াকে গ্রহণ করো , যার নিবারণ করা দেবতাদের পক্ষেও কঠিন আর এই মায়ার প্রভাবেই সমগ্র বিশ্ব মোহিত হয়ে জড়রূপ হয়ে যাবে ২৪। 

উপরোক্ত শ্লোকে বলা হয়েছ যে কৈশাসপতি ভগবান মহেশ ভগবান বিষ্ণুকে বরদান হিসেবে মায়াশক্তি প্রদান করেছিলেন, যার থেকে নিস্তার পাওয়া প্রায় অসম্ভব, ফলে ভগবান বিষ্ণু এই মায়াশক্তির অধিকারী হলেন। তাহলে এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারলেন যে, ভগবান রুদ্র কেন বিষ্ণুর মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে বিষ্ণুর মায়া অবতার মোহিনীর পেছনে ছুটেছিলেন !!

 

 

  • উপসংহার

১. ঈশ্বর জীব জগৎকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য এবং দেবতাদের কার্যসিদ্ধির জন্যে বিভিন্ন অবতার ধারণ করেন। তার মধ্যে অন্যতম অবতারের নাম মোহিনী অবতার।

২. ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, ঈশ্বর বিষ্ণু রূপে আমাদের লালন পালন করেন। আবার তিনি শিব রূপে আমাদের ধ্বংশ করেন।

. ঈশ্বর নিজের ইচ্ছায় বিষ্ণু রূপে , নিজর শিব রূপেকে মোহিনীর মায়ার প্রভাব ফেলেছেন।

৪. ঈশ্বর লীলা বশত রুদ্র রূপে তার আরেক বিষ্ণু রূপকে বর দিয়ে। তার বিষ্ণু রূপকে, রুদ্রের রূপের মতোই সমান শক্তিশালী করেছেন

. মোহিনীরূপের কাজ‌ই মায়া ফেলে বোধশূণ্য করা ।

. ঈশ্বররের শিব রূপ মোহিত না হলে ঈশ্বরেরই বরদান মিথ্যা হয়ে যেত ।

. ঈশ্বরের বীর্য বলতে, তার রূপের দৈব ঘামের জল কে বোঝানো হয়েছে। এবং শক্তিকে বুঝিয়েছেন।

. ভাগবত মহাপুরাণের শিব ও মোহনী অবতারের কোনো সমকামীতার নামগন্ধ‌ও নেই ।

৯. ঈশ্বরের রূপ ভগবান শিব কামুক নন ।

১০. ঈশ্বরের  ভগবান শিবের ঘর্মজল থেকে সোনা রুপার ন্যায় দিব্য ঐশ্বর্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্থাপিত হবার কথা বোঝানো হয়েছে।

১১. কোন অপপ্রচার সংস্কৃতি ভাইরাসের দ্বারা ভাষ্য থেকে মহাদেবের রেত পতিত হবার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কি বলা হয়েছে তা আমাদের সনাতনীদের কাছে গণ্য হয় না, গুরুপরম্পরার নিরিখে যা সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সেটিই গণ্য হয় সনাতনীদের কাছে । সুতরাং বাইরের অনুন্নত অপরিপক্ক মস্তিষ্কের ব্যক্তিদের লেখা বা অনুবাদ করা লেখার ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া স্বীকার করা হয় না ।

১২. ভাগবতপুরাণ বা শিবমহাপুরাণে কোথাও আয়াপ্পা – কে শিব ও মোহিনীর বা হরিহরের পুত্র বলা হয়নি। সুতরাং এটি অশাস্ত্রিয় ধারণা । দক্ষিণভারতের স্থানীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক কোনো স্থলপুরাণে এই কাহিনী লেখা থাকতে পারে কল্পভেদ হিসেবে, কিন্তু তা মহাপুরাণের বিচারে গ্রহণযোগ্য হয় না ।

শিব পুরাণে উল্লেখযোগ্য পরমেশ্বর শিব ও মোহনী অবতারের অপব্যাখার জবাব। শিব মহাপুরাণের মোহিনী অবতার ও শিবের কাহিনী অশ্লীল বলে মিথ্যাচারের জবাব


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করা দন্ডনীয় অপরাধ