সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ!
অনলাইনে ঈশ্বরের সাকারত্ব বিষয়ক কিছু শ্রুতি বাক্য প্রচার করা হয়েছিল। এইসকল শ্রুতি বাক্য দেখে কিছু অনার্য্য সেই সব শ্রুতি বাক্যে ঈশ্বরের নিরাকাত্ব প্রমাণ ও মূর্তি পূজা খণ্ডনের অপচেষ্টা করেছে। আমরা সাধারণ সনাতনীরা সেইসব অপচেষ্টার নিরসন করবো। পাঠকবৃন্দ আপনারা পড়ার সময়ই বুঝবেন তাদের খণ্ডনের অপচেষ্টা কতটা শিশু সুলভ ও বিকৃতমূলক। আমরা প্রথমে বেদ ব্যবসায়ীদের অপচেষ্টার ছবি দেখাবো পরে পুঙ্খানুপুঙ্খ সে সব মিথ্যাচারের নিরসন করবো।
জবাব.….
এই ব্যবসায়ীরা নিজেদের বেদব্যবসা চাঙ্গে তোলার জন্য ঈশ্বরের সাকারত্বকে নিজেদের মনগড়া ভাষ্য অনুযায়ী ব্যাখ্যা দিয়েছে। কিন্তু আমরা সাধারণ সনাতনীরা তাদের মনগড়া বেদভাষ্য পাশ কাটিয়ে আমাদের সনাতনী পরম্পরা মান্যতা অনুযায়ী বেদভাষ্য থেকে তাদের মিথ্যাচারের জবাব দেবো। পাঠকগণ! তাদের বিকৃত বেদভাষ্যেই যখন ঈশ্বররের সাকারত্ব ফোটে উঠে। তখন কূল হারিয়ে ঈশ্বরের মুখ,নখ,ইত্যাদিকে রূপালঙ্গার বলে ঈশ্বররের সাকারত্বকে পাশ কাটিয়ে নিরাকার তত্ত্বাবধায়ক বলে আখ্যায়িত করে থাকে। এই সব বেদব্যবসায়ী ও মায়াবাদীদের দাবীর খণ্ডন দেখুন।
- ১নং অপদাবীর খণ্ডন
হে অনার্যরা আপনাদের অনুবাদে “সকল প্রাণিসমূহের সহস্র মস্তক” এই বাক্যটা আপনাদের কপোলকল্পিত কারণ প্রাণী কথা সংস্কৃত মন্ত্রে অনুপস্থিত। আপনাদের গুরু দয়ানন্দ যখন বেদভাষ্য করেছিল তখন কি বুঝতে পারে নাই কোন শ্রুতিবাক্য ব্রহ্মবিষয়ক এবং কোন শ্রুতি বাক্য জীব বিষয়ক! উক্ত যজুর্বেদের মন্ত্রটি সম্পূর্ণভাবে ব্রহ্মবিষয়ক বাক্য সেখানে প্রাণী কথাটা অতিরিক্ত থাকার কারণে আপনাদের দাবি সম্পূর্ণভাবে বানোয়াট এবং গোঁজামিল। অর্থ্যাৎ আপনাদের বেদ ব্যবসা জাঁকিয়ে তোলার জন্যই আপনাদের এসব বেহায়াপনা অনুবাদ। এবারে পাঠকবৃন্দদের জন্য বিশুদ্ধ অনুবাদ দেওয়া হলো।
- ২নং অপদাবীর খণ্ডন
হে অনার্যরা আপনাদের প্রচারিত অনুবাদে আবারো সেই একই ঘটনার সূত্রপাত তা হলো স্বকপোলকল্পিত। বেদ মন্ত্রের বিকৃত অনুবাদ আর কত করবেন আপনারা!! পাঠকবৃন্দরা লক্ষ্য করুন মূল সংস্কৃতে “বৃহৎ শরীর” শব্দটি আছে এবং অনুবাদে দেখুন লিখেছে– সেই প্রভু এই ব্রহ্মাণ্ড রূপ শরীরধারী!! যা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা কারণ মূল মন্ত্রে ব্রহ্মাণ্ড কথার উল্লেখই নাই। মন্ত্রটির বিশুদ্ধ অনুবাদ হবে — সেই প্রভু বিরাট (বৃহৎ) শরীর ধারী (শরীরাঃ)।
- ৩নং দাবির খণ্ডন
হে অনার্যরা! বেদ মন্ত্রের বিকৃত অনুবাদ ছাড়া কি বিশুদ্ধ কিছু করতে পারেন নাই। এই জন্যই কি আপনারা ঈশ্বররের সাকারত্ব বিরোধী?? নিজেদের স্বকপোলকল্পিত অনুবাদ আর কত?? পাঠকবৃন্দরা! ভালো করে মন্ত্রের দিকে নজর দেন এবং অনুবাদে নজর দেন সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম। কারণ নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বিকৃত অনুবাদ। মন্ত্রে বিশ্বতঃ মুখঃ অনুবাদে তা এসে দাঁড়ালো শক্তিশালী সর্ব পদার্থের জ্ঞান 🤣!! বিশ্বত মুখ অর্থ্যাৎ ঈশ্বরের মুখ সবদিকে। তাঁরা সহজ সরল অনুবাদ না করে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য পুরো মন্ত্রের অনুবাদে গোঁজামিল ঢুকিয়ে দিয়েছে। বিশুদ্ধ অনুবাদ নিচে দেখুন
- ৪নং অপদাবীর খণ্ডন
হে অনার্যরা আপনাদের সকল অনুবাদই স্বকপোলকল্পিত। সেগুলো নিয়ে পূর্বেই বলেছি তাই আবার বলতে চাই না। এই মন্ত্রেও আপনাদের গোঁজামিল অনুবাদ সেটা দেখে নেন পাঠকবৃন্দরা। সকল অভিধানে -তনু শব্দের অর্থ শরীর। আপনাদের আবার কোন অভিধান যেখানে তনু শব্দের অর্থে – সত্য উপদেশ নীতি এসেছে এটা পাঠকবৃন্দরা দেখতে চায়? নিচে তনু শব্দের অর্থ অনলাইন ব্যাকরণ থেকে দেয়া হলো।
- ৫নং অপদাবীর খণ্ডন
- ৬নং অপদাবীর খণ্ডন
- ৭নং অপদাবীর খণ্ডন
- ৮নং অপদাবীর খণ্ডন
- ৯ নং অপদাবীর খণ্ডন
- ১০নং অপদাবীর খণ্ডণ
অপদাবীরা উল্লেখ করেছে যে, এখানে নাকি নিজের মনমতো ব্যাখা করা হয়েছে। আর এখানে নিরাকার সাকর বিষয়ে কিছুই নেই। কিন্তু পাঠকগণ! এই তথ্যটিই প্রমাণ করবে কারা নিজেদের ব্যবসা চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে মনগড়া অনুবাদ ও বেদভাষ্য করে থাকে। মূল শ্লোকটিতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে স্রষ্টারমনেকরূপম্ বিশ্বস্যৈকং পরিবেষ্টিতারং। এবং তাদের দেওয়া ছবির অন্বয় করেছে। বিশ্বস্য স্রষ্টারম্ (বিশ্বের স্রষ্টা) অনেকরূপম্ (অনেকরূপ), বিশ্বস্য একং পরিবেষ্টিতারম্ (বিশ্বের এক পরিবেষ্টনকারী)। অনেকরূপম অর্থ অনেক রূপ উল্লেখ করেছে। তাহলে সাকার নিরাকার বিষয় নিয়ে কারা মিথ্যাচার করছে? এছাড়া পাঠকবৃন্দগণ আমাদের সনাতনীদের মান্যতা বিশুদ্ধ অনুবাদ। গীতাপ্রেস-কৃত শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ-৪/১৪ মন্ত্রটিতে কি অনুবাদ করেছে নিচের ছবিটিতে দেখুন।
- ১১নং অপদাবীর খণ্ডন
হে অনার্যরা ! আপনাদের দাবি ছান্দোগ্য উপনিষদের ৩/১৪/৪ মন্ত্রটিতে ঈশ্বরকে সর্বরস, সর্বগন্ধ, সর্বকর্মা বলা হয় নাই। অথচ আপনাদের দেয়া পিকচারেই ঐসব বিশেষণে ঈশ্বরকে বিশেষায়িত করা হয়েছে। তারপরও যখন অস্বীকার করেছেন তখন তৈত্তিরীয় উপনিষদ থেকে আমরা প্রমাণ উপস্থাপন করেছি।
আরো দেখুন
⚫ শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে প্রতিমা পূজার নিষেধ করেছে কি?